শিক্ষক যখন জেডিসি পরীক্ষার্থী!

আজিজের রেজিস্ট্রেশন কার্ডশিক্ষার্থী সেজে আজিজ নামে এক শিক্ষক জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন বলে জানা গেছে। বিষয়টি জানাজানির পর পরীক্ষার হল থেকে ওই শিক্ষক কৌশলে পালিয়ে যান। ২ নভেম্বর নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার শাঁখারিপাড়া কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। ছয় দিন আগে ঘটনাটি ঘটলেও এখন পর্যন্ত ওই শিক্ষককে আটক বা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জানা গেছে, আজিজ নওগাঁ আলিয়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করার পর পুঠিয়া উপজেলার মঙ্গলপাড়া আলিম মাদ্রাসায় বেতন ছাড়াই সহকারী শিক্ষক হিসেবে ৩-৪ বছর চাকরি করেন। মাদ্রাসাটি এমপিওভুক্ত না হওয়ায় ২০১৩ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দেন। এ বছর নলডাঙ্গা উপজেলার রামশারকাজিপুর দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষার্থী হিসেবে শাঁখারিপাড়া দারুল হুদা ফাজিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি। বিষয়টি জানাজানি হলে তিনি কৌশলে কেন্দ্র থেকে পালিয়ে যান।

কেন্দ্র সচিব শাঁখাড়ীপাড়া দারুল হুদা ফাজিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান জানান, কেন্দ্রের ১৪টি কক্ষে প্রশ্ন দেওয়ার সময় বিষয়টি জানাজানি হলে আজিজ সেখান থেকে পালিয়ে যান।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, রেজিস্ট্রেশন কার্ডে ওই পরীক্ষার্থীর জন্ম তারিখ দেওয়া ছিল ১ ডিসেম্বর ২০০৭ । তবে তার প্রকৃত বয়স অন্তত ৩০ বছর।

এ ব্যাপারে রামশাকাজিপুর দাখিল মাদ্রাসার সুপার মহিদুল ইসলাম বলেন, তার মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী সংকট রয়েছে। ফলে হেফজ মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের তারা ভর্তি করান। জন্মনিবন্ধন দেখে আজিজকে ভর্তি করা হয়েছে।

তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীকে দেখলে হয়তো এমনটা ঘটতো না। তবে কী কারণে আজিজ প্রকৃত বয়স গোপন করে পরীক্ষা দিচ্ছিল তা উদঘাটন হওয়া প্রয়োজন।

পুঠিয়া মঙ্গলপাড়া আলিয়া মাদ্রাসার সাবেক সভাপতি আব্দুল ওহাব জানান, ৩-৪ বছর চাকরি করার পর ২০১৩ সালে আজিজ তার কাছেই পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছিলেন।

আজিজের বড় ভাই কায়েম বলেন, ‘এখন আজিজ কোথাও চাকরি করে না। সে কেন জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে তা তাদের বোধগম্য নয়।’

উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদের দাবি, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ২ নভেম্বর সকালে জনপ্রতিনিধি হিসেবে তিনি কেন্দ্রে গিয়ে হাতেনাতে আজিজকে ধরেন। কেন্দ্র সচিবকে না জানিয়ে কেন্দ্রে প্রবেশ করা তার ঠিক হয়নি।

জেলা প্রশাসক শাহ রিয়াজ জানান, আজিজের পরীক্ষায় অংশগ্রহণে অনুমতির বিষয়টি সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বোর্ড কর্তৃপক্ষের দেখার কথা। তারপরেও তিনি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রমজান আলী আকন্দ জানান, আজিজকে শিক্ষার্থী করার দায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান এড়াতে পারে না। বিষয়টি তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি।

প্রসঙ্গত, উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ পরীক্ষা কেন্দ্রে কেন, কীভাবে প্রবেশ করেছে তা জানতে চেয়ে কেন্দ্র সচিবকে শোকজ চিঠি পাঠিয়েছেন ইউএনও। এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ওই দিনই জবাব দিয়েছেন কেন্দ্র সচিব।