৮ দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত ৩০০ শিশু

জয়পুরহাটজয়পুরহাটে হঠাৎ করে ডায়রিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে গেছে। গত ৮ দিনে জেলা সদর হাসপাতালে ৩১৯ জন ডায়রিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন; যাদের ৩০০ জনই শিশু। প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। পর্যাপ্ত স্যালাইন না থাকায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দেড়শ’ শয্যাবিশিষ্ট জয়পুরহাট আধুনিক হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগীদের চিকিৎসার জন্য মাত্র ৮টি বেড বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কিন্তু গত জানুয়ারি থেকে হাসপাতালটিতে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়তেই আছে। প্রতিদিন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন রোগী চিকিৎসা নিতে আসছেন। এসব রোগীদের হাসপাতালে জায়গা দেওয়া কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১০ থেকে ১৭ ফেব্রুয়ারি- এই আট দিনে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৩১৯ জন; যাদের মধ্যে ৩০০ জনই শিশু। অধিকাংশের বয়স এক থেকে দুই বছরের মধ্যে। রোগীর চাপ বেশি হওয়ায় সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে নার্সদের। হাসপাতাল থেকে খাবার স্যালাইন সরবরাহ করা হলেও সংকটের কারণে স্বজনদের বাহির থেকে কিনতে হচ্ছে। আক্রান্ত শিশুদের নিয়ে সবচেয়ে বেশি বেকায়দায় পড়েছেন বাবা-মা। কারণ এসব শিশুরা ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া করতে পারছে না।

সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় হাসপাতালের ডায়রিয়া ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা গেছে ৪৬ জন ডায়রিয়া রোগী ভর্তি আছে; যাদের ৪০ জনই শিশু। অধিকাংশ শিশুর মা তাদের সঙ্গে আছেন। স্থান সংকুলান না হওয়ায় আক্রান্ত শিশুদের বারান্দার মেঝেতেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। কেউ কেউ একটু সুস্থ হলেই ছাড়পত্র নিয়ে চলে যাচ্ছেন।

কথা হয় সদর উপজেলার পারুলিয়া গ্রামের শেফালি রাণীর সঙ্গে। দেড় বছরের শিশুকন্যা শুভশ্রী রাণীকে নিয়ে চিকিৎসা নিতে এসেছেন তিনি। তিনি বলেন, ‘ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার পর থেকে আমার সন্তান মুখে কিছু খাচ্ছে না। খাবার স্যালাইনও না। নার্সরা জানিয়েছেন, শরীরে তার স্যালাইনও পুশ করা যাবে না। কীভাবে আক্রান্ত হলো জিজ্ঞেস করলে, তিনি কিছু বলতে পারেননি।

আক্কেলপুর থেকে আসা নিপা আখতার বলেন, ‘এক বছরের শিশুকে নিয়ে এসেছি। জায়গা না পেয়ে বারান্দার মেঝেতে নিয়ে রাখছি। বাচ্চা মুখে কিছু খাচ্ছে না। শুধু পানির মতো পায়খানা করছে। কীভাবে এটা হলো বুঝতে পারছি না। ছোট বাচ্চা, কিছু বলতেও পারছে না। একই অবস্থা অন্য শিশুদেরও।

এ সময় একটি শিশুর চিৎকার শুনে এগিয়ে গেলে একজন নার্স জানালেন, স্যালাইন পুশ করার জন্য শিশুটির হাতের রগ পাওয়া যাচ্ছে না। ভয়ে শিশুটি চিৎকার করছে।

ডায়রিয়া ওয়ার্ডের দায়িত্বরত সিনিয়র স্টাফ নার্স মালেকা বেগম বলেন, ‘গত জানুয়ারির শুরু থেকে হাসপাতালে ডায়রিয়া রোগী বাড়তে থাকে। তখন গড়ে ১৫ থেকে ২০ জন ভর্তি হয়। বর্তমানে এ সংখ্যা অনেক বেশি। অধিকাংশ রোগীই শিশু হওয়ায় তাদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এছাড়া সরবরাহ না থাকায় হাসপাতালে কলেরার স্যালাইনও দিতে পারছি না। তবে চাহিদা মতো খাবার স্যালাইন ও কিছু অ্যান্টিবায়োটিক হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা হচ্ছে।’

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সরদার রাশেদ মোবারক বলেন, ‘খাবারের বিষয়ে অসাবধানতার কারণেই মূলত শিশুরা ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন থানায় হাসপাতাল থাকার পরও বেশিরভাগ রোগীকে জেলা সদর হাসপাতালেই আনা হচ্ছে। এর ফলে চাপ বাড়ছে। স্যালাইনের সংকট থাকলেও আমরা সাধ্যমতো চিকিৎসা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’ তিনি পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার পাশাপাশি শিশুদের অতি সতর্কতার সঙ্গে পরিচ্ছন্ন খাবার পরিবেশনের পরামর্শ দেন।