হিমেল হাওয়া উপেক্ষা করে বোরো চাষে ব্যস্ত নওগাঁর চাষিরা

শেষ সময়ে ঘন কুয়াশা আর হিমেল হাওয়া দিয়ে নিজের তীব্রতা বুঝিয়ে দিচ্ছে শীত। এরই মধ্যে বোরো জমি প্রস্তুত ও চারা রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন উত্তরাঞ্চলের ধান-চালের রাজ্য হিসেবে পরিচিত নওগাঁর চাষিরা। বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে বোরো আবাদের ধুম চলছে। প্রতিদিন পূর্ব দিগন্তে সূর্যের আলো ফুটে ওঠার আগেই ফসলের মাঠে নেমে পড়ছেন কৃষকরা। গত মৌসুমে ধানের দাম ভালো পাওয়ায় এবং বাজারে কৃষি উপকরণ সার, তেল পর্যাপ্ত সরবরাহের ফলে বোরো চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে। চলতি মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার অতিরিক্ত জমিতে বোরো চাষ হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২৫ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ পরিমাণ জমিতে বোরো চাষ করতে এক হাজার ৮৩০ হেক্টর বীজতলা তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে বীজতলা তৈরি করা হয়েছে। ২৭ জানুয়ারি বুধবার পর্যন্ত এক হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে চারা রোপণ সম্পন্ন হয়েছে। এ মৌসুমে হাইব্রিড ধান চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি বিভাগ প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে ছয় হাজার ৭৫০ জন কৃষককে দুই কেজি উন্নত জাতের হাইব্রিড বীজ সরবরাহ করেছে। যার বাজারমূল্য ৩৪ লাখ টাকা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সড়কের পাশের জমিতে ধানের কচি চারার সবুজ গালিচা। কোথাও গভীর নলকূপ দিয়ে চলছে সেচ, আবার কোথাও ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার দিয়ে চলছে জমি প্রস্তুতির কাজ। এছাড়া ধান রোপণের জন্য বীজতলা থেকে তোলা হচ্ছে চারা। চারা তোলা আর রোপণের ব্যস্ততায় কৃষকের গায়ে শীত যেন স্পর্শ করছে না। মাঠের পর মাঠে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। সবমিলিয়ে কৃষকদের একটাই উদ্দেশ্য ঘরে তুলতে হবে বোরো ধান।

উপজেলার ঝলঝলি গ্রামের কৃষক নাজমুল হাসান বলেন, ‘প্রচণ্ড শীতের কারণে কৃষি শ্রমিকরা কাজ করতে পারছেন না। শ্রমিক সংকটের কারণে তাদের অতিরিক্ত মজুরি দিতে হচ্ছে। তাদের এই চাহিদা মেটাতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষকরা। শীতের কারণে এ বছর বোরো চাষ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে।’

ঝলঝলি গ্রামের অপর এক কৃষক আজিজুল ইসলাম বলেন, প্রায় ২০ বিঘা জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছি। প্রতি বিঘা জমিতে বোরো চাষ শেষ করতে কমপক্ষে ৩ থেকে সাড়ে ৩ হাজার টাকা খরচ করতে হবে। অনেক ক্ষেত্রে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ দেখা দিলে খরচের পরিমাণ আরও বেড়ে যাবে।’

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিদিব অরুন চন্দ্র রায় বলেন, ‘গত মৌসুমে মহাদেবপুরসহ নওগাঁ জেলার বাজারগুলোতে মোটা চালের সংকট দেখা দেওয়ায়, চলতি মৌসুমে হাইব্রিড ধান চাষ বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা হচ্ছে। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড জাতের ধান চাষ করে কৃষকরা অধিক লাভবান হবেন। এই জাতের হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ৬ মেট্রিক টন। আর জীবনকাল ১৪০ থেকে ১৪৫ দিন।’

তিনি বলেন, বাজারে ইউরিয়া, ফসফেট, টিএসপি, পটাশসহ সব ধরনের সার, তেলের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকায় বোরো ধানের ভরা মৌসুমে কোনও সংকট হওয়ার আশঙ্কা নেই। মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।