ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি রাবি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর চেতনাবিরোধী বলে তা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। সোমবার (৮ মার্চ) বেলা সাড়ে ১১টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী স্মৃতিফলক চত্বরে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তারা। ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবক ঐক্য’ ব্যানারে এ কর্মসূচি পালিত হয়।

কর্মসূচিতে নৃবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক বখতিয়ার আহমেদ বলেন, ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নির্দিষ্টভাবে একটা স্বৈরতান্ত্রিক, ফ্যাসিস্ট রেজিমের কলকাঠি হয়ে গেছে। এই আইননের যে ধারা, উপধারা রয়েছে এবং তা যদি প্রয়োগ করা হয় তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রতিদিন কয়েক লাখ গ্রেফতার করতে হবে। কারণ বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত কারও না কারও সম্মানহানি হচ্ছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আইন করে যদি কোনও লোকের সম্মান রাখতে হয়। তবে তার সম্মান আর বাকি থাকে কোথায়? কারণ সম্মান তো আর আইন করে আদায় করা যায় না। ভাবমূর্তি বলে একটি অস্পষ্ট বিষয়কে আইন করে ঠিক করা সম্ভব নয়। ফলে কয়েক লাখ লোক এ আইনে গ্রেফতার হয়নি। সুতারাং এটি একটি স্থুল চিন্তার আইন। তবে যারা এই আইন তৈরি করেছেন তারা নিজেরা টিকে থাকতে এ ধরনের আইনের নামে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসকে ব্যক্তি বিদ্বেষে ব্যবহার করছে।’

মানববন্ধনে গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মামুন হায়দার বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাংলাদেশের জন্য একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই আইনে আটক একজন কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছেন, অন্যজন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। তারা করোনাকালে আমাদের দেশের অব্যবস্থাপনা ও চিকিৎসা নিয়ে কথা বলেছিলেন। কেউ কার্টুন এঁকেছিলেন। দেশের সাধারণ নাগরিক হিসেবে তাদের এ অধিকার আছে। কিন্তু কারো কারো সে অধিকার দিতে সমস্যা হয়েছিল। সে কারণে তাদের গ্রেফতার ও নির্যাতন করা হয়েছে।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ যুব অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় যুগ্ন আহবায়ক ইমরান ইমন বলেন, কেউ যখন এই দেশের জনগণের পক্ষে কথা বলতে শুরু করে, তখন তাদের কণ্ঠ থামিয়ে দেওয়ার জন্য এই গণবিরোধী ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। আমাদের এখানে ডিজিটাল আইনের মধ্যে ভাবমূর্তি যুক্ত করা হয়েছে, রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি, সরকারের ভাবমূর্তি, প্রধানমন্ত্রীর ভাবমূর্তি। রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি বলতে কী বোঝায়? এখনও মানুষ অনাহারে রাস্তায় ঘুমায়, এতে রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় না, প্রশ্ন করেন তিনি।

কর্মসূচিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ‘কথা বলার অধিকার চাই’, ‘লেখক মুস্তাকের হত্যাকারী রাষ্ট্র’, ‘মত প্রকাশের অধিকার চাই’, ‘লেখক মোস্তাকের হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই’ প্রভৃতি স্লোগান সম্বলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।

রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সমন্বয়ক আব্দুল মজিদ অন্তরের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে আরও বক্তব্য দেন, মুক্তিযোদ্ধা নূর হোসেন, অর্থনীতি বিভাগের বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, ফোকলোর বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক আমিরুল ইসলাম কণক, রাজশাহী প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আসলাম-উদ-দৌলা, গণসংহতি আন্দোলনের রাজশাহী জেলা শাখার সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট মুরাদ মোর্শেদ, অ্যাডভোকেট হাসিব, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট রাবি শাখার আহ্বায়ক রিদম শাহরিয়ার প্রমুখ। কর্মসূচিতে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।