বিধবা ভাতার কার্ড ফেরত দেওয়া সেই নারীকে সংবর্ধনা

বগুড়ার আদমদীঘিতে লাজিনা বেওয়া নামের এক স্বামীহারা নারী তার বিধবা ভাতার কার্ড ফেরত দেওয়ায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিশ্রুতি অনুসারে সংসারে সচ্ছলতা আসায় তিনি ভাতার এ কার্ড ফেরত দেন। এমন উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম তাকে সংবর্ধনা দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১০ জুন) দুপুরে ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী
লীগ কার্যালয়ে তাকে ফুল দিয়ে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।

লাজিনা বেওয়া বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়নের ধুলাতইল গ্রামে মৃত হাদিস আলীর স্ত্রী। মাত্র ১০ শতক সম্পত্তি রেখে স্বামী ১৯৮২ সালে গেলে ২২ বছর বয়সে বিধবা হন লাজিনা। ছোট দুই মেয়ে ও ছয়মাসের ছেলেকে আঁকড়ে নতুন করে বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে ১৯৯৮ সালে বিধবা ভাতার তালিকাভুক্ত হন। তবে তখন তিনি স্থির করেছিলেন, সচ্ছলতা ফিরলে কার্ড ফেরত দেবেন।

লাজিনার একমাত্র ছেলে মামুনুর রশিদ মামুন লেখাপড়া শেষে ২০১৪ সালে মালয়েশিয়ায় যান। দুই বছর পর দেশে ফিরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে চাকরি পান। ছেলে আয় করায় লাজিনা বেওয়ার সংসারে অভাব দূর হয়ে যায়; আসে সচ্ছলতা। দুই মেয়েকে বিয়েও দিয়েছেন। তাই তিনি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিধবা ভাতার কার্ড ফের দিয়ে হিসাব বন্ধের আবেদন করেছেন।

উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শরিফ উদ্দিন জানান, দেশে এমন মানুষ বিরল। এ উপজেলায় কার্ড ফেরত দেওয়ার ঘটনা ঘটেনি। ওই নারীর সিদ্ধান্ত খুব ভালো লেগেছে। হিসাব বন্ধের জন্য আবেদন দিয়েছেন। শিগগিরই হিসাব বন্ধ করে দেওয়া হবে। ওই নারীর কাছে শিক্ষা নেওয়া উচিত; প্রয়োজন ছাড়া কোনও কিছু নেওয়া ঠিক নয়।

এদিকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে ছাতিয়ানগ্রাম ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক মো. বাবলু, এক নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোমিন পাহালোয়ান রুস্তম, তিন নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহাবুবুর রহমান ধলু, আওয়ামী লীগ নেতা চিকিৎসক হিটলার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঘুষ দিয়েও কার্ড পেতে সবাই যখন ব্যস্ত, তখন তিনি (লাজিনা) ফেরত দিতে চান। এটা সত্যিই আশ্চর্যজনক ঘটনা। এ ইউনিয়নে এমন ঘটনা কখনও ঘটেনি। তার এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে তাকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছে।