করোনায় চাকরি হারিয়ে মাশরুম চাষে সাফল্য

নওগাঁর মান্দায় মাশরুম চাষ করে সফলতা পেয়েছেন সাইদুর রহমান (৪৫) নামে এক উদ্যোক্তা। তিনি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চাকরি করতেন। করোনার প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে চাকরি হারিয়ে বাড়ি চলে আসেন। এরপর শুরু করেন মাশরুম চাষ। এতে ধীরে ধীরে তিনি স্বল্প বিনিয়োগে সাফল্য পাচ্ছেন।  

সাইদুর রহমানের বাড়ি মান্দা উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের চকরামাকান্ত দহপাড়া গ্রামে। তিনি কুরিয়ারের মাধ্যমে ঢাকার মোহাম্মদপুরের আঁটিবাজার থেকে আট কেজি মাশরুম বীজ আনেন। এরপর গত বছরের ডিসেম্বর মাসে বাড়ির দ্বিতীয় তলায় ১২ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬ ফুট প্রস্থের ঘরে রশিতে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখা হয় এক-একটি মাশরুম বীজের প্যাকেট। যা থেকে উৎপন্ন হয় পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকার মাশরুম।

মাশরুম চাষি সাইদুর রাহমান বলেন, ‘করোনায় চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে পড়ায় দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ছেলের কথায় সায় দিয়ে মাশরুম চাষ করি। অয়েস্টার জাতের মাশরুমের বীজ সংগ্রহ করে চাষ শুরু করা হয়। ঘরে ৫৮টি মাশরুম বীজ প্যাকেট (স্পন প্যাকেট) আছে। এ বছর জানুয়ারি থেকে মার্চের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত সাত হাজার টাকার মাশরুম বিক্রি করেছি। যেখানে আড়াই হাজার টাকার মতো বিনিয়োগ হয়েছে। একেকটি স্পন প্যাকেট তৈরি করতে খরচ হয়েছে ৩০ টাকা। আর এমন স্পন প্যাকেট বিক্রি হয় ৪৫০ টাকায়। প্রতি কেজি মাশরুম বিক্রি করা হয়েছে ২৫০ থেকে ২৮০ টাকায়। আশেপাশের লোকজন এসে মাশরুম কিনে নিয়ে যান। যখন বেশি উৎপাদন হয় তখন স্থানীয় বাজারেও বিক্রি করা হয়।’

.তিনি বাজারজাত করার সমস্যা উল্লেখ করে বলেন, ‘এলাকায় মাশরুমের তেমন পরিচিতি না থাকায় মাইকিং ও লিফলেট ছাপিয়ে প্রচারণা করেছি। অনেক ডায়াবেটিস রোগী কিংবা সাধারণ মানুষ চাহিদা দেখিয়েছেন। প্রথমবার ভালো বীজ পাওয়া যায়নি। কিন্তু তারপরও ভালো লাভ হয়েছে। উৎপাদন করা খুব সহজ হলেও বিক্রি করতে অনেকটাই ঝামেলা। যদি বিক্রির নিশ্চয়তা থাকতো তাহলে কাজটি আরও সহজ হতো। ভবিষ্যতে এর উৎপাদন বড় পরিসরে করার পরিকল্পনা আছে।’

মাশরুমের উৎপাদন পদ্ধতি সম্পর্কে সাইদুর রহমানের ছেলে সাজিদ হোসেন আরাফাত বলেন, ‘মাশরুম চাষের জন্য দেড় থেকে দুই ইঞ্চি খড় সিদ্ধ করে হালকাভাবে শুকাতে হয়। যাতে চাপ দিলে পানি না ঝরে। এরপর খড়গুলো পলিথিনে প্যাকেটে রেখে তাতে মাশরুমের বীজ দিতে হবে। প্যাকেটের মুখ বন্ধ করে দিয়ে কয়েকটা ছিদ্র করে দিতে হবে। এরপর ২০ থেকে ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রায় অন্ধকার ঘরে রেখে দিতে হবে। দিনে ৮-১০ বার স্পনগুলোতে পানি দিতে হয়। সাধারণত ২৫-৩০ দিনে মধ্যে পলিথিনের গায়ে সূক্ষ্ম ছিদ্র দিয়ে সাদা আস্তরণ দেখা যাবে যাকে মাইসেলিয়াম (মাশরুমের ছাতা) বলে। এরপর মাশরুম খাওয়ার উপযোগী হয়।’

মান্দা উপজেলা কৃষি অফিসার শায়লা শারমিন বলেন, ‘সাইদুরের মাশরুমের প্রজেক্টটি দেখেছি। তার উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমরা কিছু কিনেছিলাম। মাশরুম চাষে বাজারজাত করা সবচেয়ে বড় বিষয়। মাশরুম চাষের উপর একটা বরাদ্দ এসেছিল, সেটা এখন আর নেই। পরবর্তী সময়ে কোনও বরাদ্দ আসলে তার জন্য থাকবে।’