আনন্দময় যাত্রার মাঝপথে লাশ হওয়া ১৬ জনই নিকটাত্মীয়

বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়েছিল কয়েকদিন আগেই। বুধবার (৪ আগস্ট) ছিল নবদম্পতিকে নিয়ে ঘরে ফেরার পালা। সে উদ্দেশ্যেই চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার চন্দ্র নারায়ণপুর ডাইলপাড়া থেকে যাত্রা শুরু করে ছিলেন বরের বাবা, ভাইবোন ও আত্মীয়-স্বজন মিলে প্রায় ৪০ জন। কিন্তু মাঝপথেই বজ্রাঘাত কেড়ে নেয় ১৬ জনের প্রাণ। আনন্দময় যাত্রা মুহূর্তেই রূপ নেয় যাতনায়।

স্থানীয় ও হতাহতদের স্বজনদের কাছ থেকে জানা গেছে, লাশের সারিতে ছিলেন– বরের বাবা, বোনের স্বামী, চাচা ও চাচাতো ভাইবোন, ফুপু, নানা-নানি, খালা ও খালাতো ভাই, মামা-মামি ও মামাতো ভাই।

যাত্রাপথে বৃষ্টিপাত শুরু হলে শিবগঞ্জের চর পাঁকা ইউনিয়নের আলিমনগর ঘাটে পদ্মার পাড়ে যাত্রাবিরতির সময় ঘটে এই মর্মান্তিক ঘটনা। ঘাটের টিনের চালার নিচে সবাই আশ্রয় নিলে হঠাৎই বজ্রপাত হয়। একসঙ্গে এত মানুষের মৃত্যুতে এলাকায় ও হতাহতদের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশন অফিসার মেহেরুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনাস্থল থেকে আমরা ১৬ জনের মরদেহ উদ্ধার করি। তার মধ্যে ১১ জনের মরদেহ এবং জীবিত আরও ১৭ জনকে আমরা চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। অন্যরা সুস্থ আছেন বলে জানিয়েছেন তাদের স্বজনরা। আহতরা বর্তমানে সদর হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কেউ নিখোঁজ নেই। নৌকায় প্রায় ৪০ জনের মতো বরযাত্রী ছিল।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ আধুনিক সদর হাসপাতালের আরএমও ডা. খাইরুন নাহার নাসু জানান, বর্তমানে বজ্রাঘাতে আহত ১৬ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন এবং তারা সুস্থ আছেন। এছাড়া একজন শিশুর অবস্থা খারাপ হওয়ায় তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

এ ঘটনায় সমবেদনা জানিয়ে হতাহতদের পরিবারকে জেলা প্রশাসন সহায়তার আশ্বাস দিয়েছে। জেলা প্রশাসক মঞ্জুরুল হাফিজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ঘটনার পরপরই আমরা স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি এবং হতাহতদের খোঁজখবর নিয়েছি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারগুলোকে আর্থিক সহায়তা এবং আহতদের চিকিৎসার খরচও বহন করা হবে।’

এদিকে, সদর উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মওদুদ আলম খাঁ জানান, বজ্রাঘাতে নিহতদের ১৬ জনই সদর উপজেলার বাসিন্দা। তাদের কারও বাড়ি চরবাগডাগ, কারও সুন্দরপুর ও ঝিলিম ইউনিয়নে। সবাই বরপক্ষের কাছের আত্মীয়-স্বজন। নিহতদের আর্থিক সহায়তা হিসেবে এরই মধ্যে ২৫ হাজার টাকা এবং আহতদের ৭ হাজার করে টাকা প্রদান করা হয়েছে। 

বুধবার রাত ৮টার পর মৃতদের পারিবারিকভাবে নিজ নিজ এলাকায় নামাজে জানাজা শেষে দাফন সম্পন্ন হয়।  

আরও খবর: শিবগঞ্জে বজ্রাঘাতে ১৬ বরযাত্রীর মৃত্যু