লাশ চুরির শঙ্কায় বজ্রাঘাতে নিহতদের কবরে ঢালাই

চাঁপাইনবাবগঞ্জের পদ্মা পাড়ে বজ্রাঘাতে একসঙ্গে ১৬ জনের মৃত্যুর ঘটনায় পরিবারগুলোতে এখন চলছে শোকের মাতম। কেউ হারিয়েছেন বাবা-মা, কেউ হারিয়েছেন ভাই-বোন, দাদা-দাদী, নানা-নানি; কেউবা হারিয়েছেন ছেলের সঙ্গে স্ত্রীও। এ যেন শুধু আপনজন হারোনোর হাহাকার। পরিবারের অভিভাবকদের হারিয়ে তাদের সামনে এখন অনিশ্চিত জীবন। 

আর নিজের বিয়ের আনন্দঘন মুহূর্তে বাবাসহ আপনজনদের হারানোর শোক বিশ্বাসই করতে পারছেন না বর আল মামুন। জীবনের নতুন অধ্যায় শুরুর মুহূর্তের এই শোক হয়তো তাকে তাড়িয়ে বেড়াবে সারাজীবন। এদিকে একসঙ্গে এত মানুষের মৃত্যুতে শোকে হতবিহ্বল নারায়ণপুর ইউনিয়নের ডাইলপাড়া এলাকাবাসী।

এদিকে বজ্রাঘাতে নিহত একই পরিবারের ছয় জনকে কবর দেওয়া হয়েছে বাড়ির আঙিনায়। লাশ চুরির শঙ্কায়  এমনটা করা হয়েছে। তাদের কবর সুরক্ষিত করতে ইটের দেয়াল দিয়ে প্রাচীর তৈরি করা হয়েছে। গ্রামবাসী বলছে লাশ পাহারার সুবিধায় নেওয়া হয়েছে এমন পদক্ষেপ। সদ্য বিবাহিত আল মামুনের বোন, দুলাভাই, মামা-মামী ও নানা-নানিকে কবর দেওয়া হয়েছে এখানে।

নিহত তোবজুলের ছেলে বাশির বলেন, বজ্রাঘাতে মারা যাওয়া লাশ চুরির শঙ্কা থাকে, এ জন্য গোরস্থানে মাটি দেওয়া হয়নি। বাড়ির সামনে স্বজনদের দাফন করার পর তাদের কবরগুলোর ওপর কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে এবং চারপাশে ইটের প্রাচীর দিয়ে সুরক্ষিত করা হয়েছে।

স্থানীয় আব্দুল বারী বলেন, আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে শুনে আসছি বজ্রাঘাতে মারা যাওয়া লাশ বিভিন্ন কাজের জন্য চুরি হয়। এজন্য এলাকাবাসী লাশগুলো হেফাজতে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

এত মানুষের মৃত্যুতে স্বজনদের মতো সমব্যাথী এলাকাবাসীও। তারা মানতে পারছেন না এমন মৃত্যু। অসহায় পরিবারগুলোর পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান তাদের। শুধু তাই নয় প্রাকৃতিক দুর্যোগে মানুষের মৃত্যুর হার কমাতে সরকারের প্রতি পদক্ষেপ নেওয়ারও দাবি স্থানীয়দের। এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের দাবি অসহায় পরিবারগুলোর এখন প্রয়োজন সরকারি পুনর্বাসন।
  
নারায়ণপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড সদস্য আজিজুর রহমান আজিম বলেন, জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে প্রশাসনের পাশাপাশি আমরা যতটুকু পেরেছি আর্থিকভাবে সহায়তা করেছি। অভিবাবক এবং উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারিয়ে পরিবারগুলো এখন অসহায়। তাদের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ইফফাত জাহান বলেন, তাৎক্ষণিকভাবে আমরা মৃত পরিবারগুলোকে ২৫ হাজার টাকা এবং আহতদের চিকিৎসার জন্য সাত হাজার করে টাকা দিয়েছি। আরও সহযোগিতার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী বরাবর প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। নতুন করে সহযোগিতা আসলে বিধি মোতাবেক আমরা সেটা তাদের কাছে পৌঁছে দেবো। 

আরও পড়ুন:

আনন্দময় যাত্রার মাঝপথে লাশ হওয়া ১৬ জনই নিকটাত্মীয়

‘বজ্রাঘাতে মৃতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা করে দেওয়া হবে’

শিবগঞ্জে বজ্রাঘাতে ১৬ বরযাত্রীর মৃত্যু