পানি বাড়ছে যমুনায়, দুর্ভোগ বাড়ছে মানুষের

সিরাজগঞ্জের পাঁচটি উপজেলায় পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। এসব এলাকায় বিশুদ্ধ খাবার পানি ও গো-খাদ্যের সংকট দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে নিম্নাঞ্চলের চার হাজার ৩৬২ হেক্টর ফসলি জমি। এতে নষ্ট হচ্ছে রোপা আমন, বোনা আমন, আগাম সবজি, আখ, বীজতলা ও বাদামসহ বিভিন্ন ফসল। 

এদিকে যমুনা নদীর পানি বেড়ে বিপৎসীমার ৪০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আর কাজিপুর মেঘাই ঘাট পয়েন্টে ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ১২ সেন্টিমিটার। এখন এই পয়েন্টে বিপৎসীমার ৪২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

যমুনাসহ অভ্যন্তরীণ করতোয়া, ইছামতি, ফুলজোড়, হুরাসাগর ও বড়াল নদীর পানিও বাড়ছে। সব নদ-নদীর পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চলের ফসলের মাঠগুলো তলিয়ে গেছে। এসব এলাকার বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাটে পানি উঠে পড়ায় বিপাকে পড়েছেন বাসিন্দারা। 

পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন কয়েক হাজার মানুষ

বন্যাকবলিত এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, পানি বৃদ্ধির ফলে প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। পানি বৃদ্ধি ও ভাঙন অব্যাহত থাকায় অসহায় হয়ে পড়েছেন নদী পাড়ের মানুষ। গবাদিপশু ও নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস নিয়ে বাড়িঘর ছেড়ে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে। অনেকে আবার দূরের কোনও আত্মীয়ের বাড়ি আশ্রয় নিয়েছেন। শুকনো জ্বালানি কাঠের অভাবে রান্না করা যাচ্ছে না। খোলা আকাশের নিচে খড়কুটো দিয়ে কোনোমতে রান্না করে খাচ্ছেন।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলা ইউনিয়নের রানীগ্রাম এলাকার বাসিন্দারা জানান, বসতবাড়ি তলিয়ে গেছে। ঘরের মধ্যে গলা সমান পানি। কোনও জিনিসপত্র বের করতে পারেননি। কয়েকটি টিন খুলে এনে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। 

একই গ্রামের সকিতন ভেওয়া, শীলা খাতুন, আফজাল হোসেন জানান, তাদের ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। যাওয়ার মতো কোনও জায়গা নেই। তাই ওয়াপদার বাঁধের পলিথিন টানিয়ে কোনোমতে আছেন তারা। বৃষ্টির কারণে সময়মতো রান্নাও করতে পারছেন না। অনেক সময় না খেয়েও থাকতে হচ্ছে তাদের।

বাড়িঘর ছেড়ে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে

কাজিপুর উপজেলার নিশ্চিন্তপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জালাল উদ্দিন জানান, এই ইউনিয়নের ডিক্রীদোরতা গ্রাম ও জিআরডিপি নৌকাঘাট পয়েন্টে ব্যাপক আকারে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে। ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে এলাকাবাসী। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিলীন হচ্ছে আবাদি জমি ও নতুন স্থাপন করা বৈদ্যুতিক খুঁটি।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, সিরাজগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ছয় সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪০ উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। আগামী ৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পানি বাড়বে বলে বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মো. আবু হানিফ জানান, গত কয়েক দিনে যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ফলে নিম্নাঞ্চলের চার হাজার ৩৬২ হেক্টর জমির ফসল পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। এসব ফসলের মধ্যে রোপা আমন, বোনা আমন, আগাম সবজি, আখ, বীজতলা ও বাদাম রয়েছে।

সিরাজগঞ্জ জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বলেন, বন্যাকালীন দুর্যোগ মোকাবিলায় ৫৫০ টন চাল ও নগদ আড়াই লাখ টাকা মজুত রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলাগুলোতে মোট ১২৫ টন চাল মজুত ও এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে জেলায় কত মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন এ তথ্য নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি।