স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে টিকার অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মিলেছে

নাটোরের বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রতন কুমার সাহার বিরুদ্ধে পাঁচ ইউনিয়নে করোনার টিকা কার্যক্রম পরিচালনা না করেও বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তিন সদস্যের ওই কমিটি তদন্ত শেষে কর্তৃপক্ষকে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত এ প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

জেলা সিভিল সার্জন ডা. মিজানুর রহমান বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, করোনার টিকা কার্যক্রম পরিচালনা না করেও বরাদ্দের টাকা আত্মসাতের অভিযোগের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৭ জুলাই নাটোর সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি) ডা. আরশেদ আলীকে সভাপতি, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার ডা. রাসেলকে সদস্য সচিব এবং বড়াইগ্রাম উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আসাদুজ্জামানকে সদস্য করে তিনজনের কমিটি গঠন করা হয়।

গত ১ আগস্ট কমিটি তদন্ত সম্পন্ন করে ৫ আগস্ট প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইউনিয়ন পর্যায়ে টিকাদান কর্মসূচি না হওয়া সত্ত্বেও ব্যয়ের বিল জমা দিয়ে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে, যা বিধিসম্মত নয়।

এক প্রশ্নের জবাবে সিভিল সার্জন বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনটি পাঠানো হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও কোনও আদেশ আসেনি।’

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ৩১ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদফতর করোনার টিকা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য খরচ বাবদ অর্থ বরাদ্দ করে। এরই অংশ হিসেবে বাগাতিপাড়া উপজেলার পাঁচ ইউনিয়নের ১৫ ওয়ার্ডের জন্য ১৭ লাখ ৪৯ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

এর বিবরণীতে বলা হয়, উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে মোট ১২টি টিমে টিকাদানকারী হিসেবে প্রশিক্ষণ শেষে ২৪ জন কাজ করবেন। প্রতি টিমে চারজন করে মোট ৪৮ জন স্বেচ্ছাসেবী থাকবেন। খরচের বিবরণীতে সংশ্লিষ্ট সবার আপ্যায়ন, ডিস্ট্রিবিউট পয়েন্ট পর্যন্ত ভ্যাকসিন ও লজিস্টিক পরিবহন ব্যয়, ভিজিট ব্যয়, সুরক্ষা সামগ্রী ব্যয়, অনিয়মিত শ্রমিকদের খরচ এবং অংশগ্রহণকারীদের সম্মানী ভাতাও নির্ধারণ করে দেওয়া হয়।

সে অনুযায়ী সরকার নির্ধারিত অর্থ পাঠালেও ভ্যাকসিনের অভাবে উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে কোথাও প্রশিক্ষণ ও টিকাদান কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে জেলা থেকে শুধুমাত্র উপজেলা পর্যায়ে ভ্যাকসিন আনা-নেওয়াসহ অন্যান্য কিছু খরচ হলেও সঙ্গত কারণেই মোট বরাদ্দের একটা বড় অংশ জেলার অন্যান্য উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগকে ফেরত দেয়। কিন্তু বাগাতিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রতন কুমার সাহা সব কার্যক্রমের ‘ভুয়া ভাউচার’ তৈরি করে সেগুলো স্বাস্থ্য বিভাগে জমা দিয়ে বরাদ্দের সব টাকা উত্তোলন করেছেন বলে অভিযোগ ওঠে। যদিও রতন কুমার সাহা দাবি করেন, নিয়ম মেনে সব কাজ সম্পন্ন করে বিল উত্তোলন করা হয়েছে।