ইনজেকশন দিয়ে যুবককে হত্যার অভিযোগ

বগুড়ায় ক্লিনিকের মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্বে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন সেলিম হোসেন (২৭) নামে যুবককে চেতনানাশক ইনজেকশন দিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (৯ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার রাতেই ক্লিনিকের আরেক অংশীদার সাদ্দাম হোসেনকে (২৬) আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে হাসপাতাল প্রশাসন। শুক্রবার (১০ সেপ্টেম্বর) সেলিম হোসেনের বড় ভাই আবদুস সামাদ বাদী হয়ে বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেছেন। এরপর সাদ্দামকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ। 

সেলিম হোসেন গাবতলী উপজেলার আটবাড়িয়া গ্রামের আবদুস সাত্তারের ছেলে। সাদ্দাম হোসেন একই উপজেলার রামেশ্বরপুর উত্তরপাড়ার জিন্নাহ মিয়ার ছেলে।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সাদ্দাম হোসেন হত্যার উদ্দেশে ইনজেকশন পুশ করার কথা স্বীকার করেছেন। তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে শনিবার (১১ সেপ্টেম্বর) আদালতে পাঠানো হবে।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া সদরের পীরগাছা বাজারে সালমা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ক্লিনিকের মালিকানা নিয়ে অংশীদার কাম নার্স সাদ্দাম হোসেনের সঙ্গে শাহিন আলম ও তার ভাই সেলিম হোসেনের (ম্যানেজার) বিরোধ সৃষ্টি হয়। প্রায় দুই মাস আগে শাহিনকে চেতনানাশক পুশ করে হত্যার অভিযোগ ওঠে। কোনও ‘প্রমাণ’ না থাকায় ঘটনাটি চাপা পড়ে যায়।

সেলিমের ভাই আবদুস সামাদ জানান, তারা সাতজন প্রায় নয় মাস আগে পীরগাছা বাজারে সালমা ডায়াগনস্টিক সেন্টার অ্যান্ড ক্লিনিক প্রতিষ্ঠা করেন। সাতজনের মধ্যে তাদের পরিবারের চারজনের অর্ধেক এবং অপর অর্ধেক শেয়ার সাদ্দাম হোসেনের ছিল। তাদের মধ্যে সাদ্দাম হোসেন নার্সের (সেবক) এবং সেলিম ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করতেন।

বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ক্লিনিকে থাকা অবস্থায় সেলিম অসুস্থ বোধ করেন। তখন সাদ্দাম হোসেন জানান, তার (সেলিম) উচ্চ রক্তচাপ আছে, হাসপাতালে নেওয়া দরকার। খবর পেয়ে সামাদ ১০ টার ৫০ মিনিটে ভাইকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে চতুর্থ তলায় মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করেন। সাদ্দাম হোসেন রাত ১২টা ৫ মিনিটে সেলিমকে দেখতে যান। এ সময় তার শরীরে স্যালাইন চলছিল। একপর্যায়ে সাদ্দাম হোসেন তার পকেট থেকে ইনজেকশন বের করে সেলিমের হাতে লাগানোর ক্যানুলা দিয়ে পুশ করেন। 

কীসের ইনজেকশন দেওয়া হলো—জানতে চাইলে সাদ্দাম বলেন, গ্যাসের ইনজেকশন। তিনি অ্যাম্পুলের লেবেল ছিঁড়ে ফেলেন এবং হাসপাতাল থেকে পালানোর চেষ্টা করেন। এর ১০ মিনিটের মধ্যে সেলিম মারা যান। এ সময় কর্তব্যরত নার্স ও অন্যরা সাদ্দামকে চেতনানাশক ইনজেকশনের অ্যাম্পুলসহ আটক করে পুলিশে দেন।

আব্দুস সামাদ আরও জানান, গত ৭ জুলাই তার আরেক ছোটভাই শাহিন আলমকে পীরগাছা বাজারের ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় স্যালাইনের মাধ্যমে ইনজেকশন পুশ করার পর রাতে তার মৃত্যু হয়। পরে বলা হয়, হৃদরোগে মৃত্যু হয়েছে। তখন শাহিনের মৃত্যুর ঘটনায় কাউকে সন্দেহ করা হয়নি। সেলিমকে একই কায়দায় হত্যা করেছেন সাদ্দাম হোসেন।

সদর থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) আবুল কালাম আজাদ জানান, হত্যার বিষয়টি স্বীকার করে সাদ্দাম হোসেন বলেছেন, ক্লিনিকের আয় থেকে তাকে বঞ্চিত করা হচ্ছিলো। এ কারণে কৌশলে সেলিমকে হত্যা করেন  তিনি। তবে দুই মাস আগে শাহীনকে হত্যার ব্যাপারে মুখ খোলেননি। তাকে আজ আদালতে পাঠিয়ে পাঁচ দিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।