সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জের পাঙ্গাসী ইউনিয়নের বেংনাই উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাতায়াতের কোনও রাস্তা নেই। বিদ্যালয়টিতে শিশুশিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা কখনও কলার ভেলায়, কখনও ধানক্ষেতের মাঝ দিয়ে কাদা-পানি মাড়িয়ে যাতায়াত করেন। প্রতিষ্ঠার ৩৩ বছর কেটে গেলেও বিদ্যালয়টিতে যাওয়ার রাস্তা পায়নি শিশুরা। এলাকাবাসী ও স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছে, চলাচলের রাস্তার জন্য অনেক জায়গায় ধরনা দিয়েও কোনও লাভ হয়নি। এজন্য এই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর উপস্থিতি দিন দিন কমে যাচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সড়ক থেকে প্রায় আড়াই শ’ মিটার দূরে মাঠের ভেতরে বেংনাই উত্তরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। স্থানীয়দের উদ্যোগে ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ২০১৩ সালে এটি সরকারি হয়। বিদ্যালয়ে যাতায়াতের জন্য ২০১২-১৩ অর্থবছরে দুই লাখ টাকা ব্যয়ে খালের ওপর নির্মাণ করা হয়েছিল একটি কালভার্ট। কিন্তু, সেটি এখন কোনও কাজেই আসছে না। কালভার্টটির উভয় পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা হয়নি। তাই পানির মাঝে দাঁড়িয়ে রয়েছে কালভার্টটি।
স্কুলের সামনের মহাসড়কে দাঁড়াতেই দেখা যায় শিক্ষার্থীরা স্কুল শেষ করে বাড়ি ফিরছে। ফেরার রাস্তা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেই পঞ্চম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী বলে ওঠে, ‘এখন তো পানি কমে গেছে, তাই অন্যের জমির আইল ও বাড়ির ওপর দিয়ে যাওয়া যায়। আর কদিন আগে সেই বাড়িগুলো পেরিয়েও যেতে হতো কাদা-পানি মাড়িয়ে। আর বর্ষার সময় তো কলা গাছের ভেলাই একমাত্র ভরসা।’
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের যাতায়াত ও রাস্তার বিষয় নিয়ে কথা হয় ওই এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক ও সোলাইমান শেখসহ আরও অনেকের সঙ্গে। তারা বলেন, ‘আমরা অনেককে এই বিষয় নিয়ে অনেকবার বলেছি কিন্তু আজও কোনও সমাধান হয়নি। বর্ষায় যখন কলা গাছের ভেলায় এই শিশুরা স্কুলে যায়, আমরা তখন প্রতিটি মুহূর্তে আতঙ্কে থাকি, না জানি কখন কী খারাপ খবর আসে। এ ছাড়াও শুকনো মৌসুমেও স্কুলে যেতে হয় অনেকের বাড়ির ও জমির ওপর দিয়ে। তখন অনেকের জমির ফসলেরও ক্ষতি হয়। এজন্য অনেকে খারাপ ব্যবহারও করেন।’
এ বিষয়ে ওই বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শেখ আব্দুর রহিম মাস্টার বলেন, ‘ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা খুব কষ্ট করে স্কুলে যাতয়াত করে। এখানে একটি রাস্তা বা ফুট ওভারব্রিজ খুবই দরকার। পাশেই একটি ঈদগাহ মাঠ আছে, রাস্তাটি হলে সবার জন্যই খুব উপকার হবে।’
পাঙ্গাসী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আব্দুস সালাম বলেন, ‘সেখানে একটি কালভার্ট নির্মাণের জন্য আমি ২০১২-১৩ অর্থবছরে এডিপির দুই লাখ টাকার একটি কাজ টেন্ডারের মাধ্যমে দিয়েছিলাম। কিন্তু ঠিকাদার তখন কাজ শেষ না করেই অফিস থেকে বিল তুলে নেন। আমি জানি না কীভাবে তারা বিল পেলো। আমি চেষ্টা করবো সামনে কোনও প্রকল্প আসলে সেটি দিয়ে শিশুদের জন্য একটি রাস্তা নির্মাণ করে দেওয়ার।’
এ বিষয়ে রায়গঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমি নিজেও বিষয়টি দেখেছি। ১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে সরকারি হয়। কিন্তু আজ অবধি রাস্তা না হওয়াটা খুব দুঃখজনক।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজিবুল আলম বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। তবে সেখানে শিক্ষার্থীদের জন্য রাস্তা না থাকলে আমাদের কাছে আবেদন করলে আমরা অবশ্যই সেটি পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেবো।’