রাজশাহীতে একদিনে সর্বোচ্চ করোনা শনাক্ত

রাজশাহী বিভাগে একদিনে ৭৯ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনিবার সকাল আটটা থেকে রবিবার সকাল আটটা পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগের সাত জেলায় ৫৭২ জনের নমুনা পরীক্ষার পর এই ফল পাওয়া যায়। শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮১। এটি চলতি বছরের মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ শনাক্তের হার। এর আগে ১১ জানুয়ারি সর্বোচ্চ ১১ দশমিক ৭২ শতাংশ করোনা শনাক্ত হয়েছিল। তবে করোনায় গত দুই দিনে এ বিভাগে কেউ মারা যাননি।

রবিবার (১৬ জানুয়ারি) রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) নাজমা আক্তার স্বাক্ষরিত প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার সকাল আটটা থেকে রবিবার সকাল আটটা পর্যন্ত রাজশাহী বিভাগের সাত জেলায় ৫৭২ জনের নমুনা পরীক্ষা হয়েছে। এতে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৭৯ জনের। নমুনা পরীক্ষা অনুপাতে শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ৮১ শতাংশ। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় ৮৩৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৫০ জনের করোনা শনাক্ত হয়। নমুনা পরীক্ষার অনুপাতে শনাক্তের হার ছিল ৬ শতাংশ। অর্থাৎ আগের দিনের তুলনায় বিভাগে নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা কমলেও শনাক্তের হার ও পরিমাণ বেড়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন সংক্রমিত ৭৯ জনের মধ্যে বগুড়ায় সর্বোচ্চ ২৫, রাজশাহীতে ২২, নওগাঁয় ৮, নাটোর ও পাবনায় সাত জন করে এবং জয়পুরহাট ও সিরাজগঞ্জে পাঁচ জন করে রয়েছেন। এদিন নমুনা পরীক্ষা না হওয়ায় চাঁপাইনবাবগঞ্জে কারও করোনা শনাক্ত হয়নি। নতুন সংক্রমিত ৭৯ জন নিয়ে বিভাগে মোট করোনা শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে এক লাখ ৫০৬ জন।

বিভাগে এখন পর্যন্ত করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন ৯৬ হাজার ৫৫১ জন। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন এক হাজার ৬৯৪ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২০ জন।

রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (রোগনিয়ন্ত্রণ) নাজমা আক্তার বলেন, রাজশাহী বিভাগে গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার বেশি। এবার করোনার সংক্রমণ দ্রুত ছড়াচ্ছে। এ অবস্থায় সরকারের দেওয়া নির্দেশনা মেনে চলার আহ্বান জানান তিনি।

এদিকে রাজশাহী নগরীতে করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনের সংক্রমণ নিয়ে বিশেষজ্ঞরা চিন্তিত হলেও সাধারণ মানুষ স্বাস্থ্যবিধি নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন নয়। এখনও নিজের খেয়াল-খুশিমতোই চলাফেরা করছে তারা। রাস্তায় বের হলে থাকছে না মাস্ক। আবার মাস্ক থাকলেও তা সঠিক নিয়মে পরছেন না। নগরীতে দূরপাল্লার বাসসহ অভ্যন্তরীণ ছোট পরিবহন, অটোরিকশা, চার্জার রিকশাসহ প্রাইভেট গাড়িতে প্রতি ঘণ্টায় হাজারো মানুষ চলাচল করেন। কিন্তু এসব পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি মানার তেমন কোনও বালাই নেই।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওমিক্রন মোকাবিলায় রামেক হাসপাতাল পুরোপুরি প্রস্তুত রয়েছে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ কমে যাওয়ার কারণে হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে রোগীর সংখ্যাও একেবারেই কমে গিয়েছিল। কিন্তু গত কয়েকদিন থেকে রামেক হাসপাতালে আক্রান্ত কিংবা সাসপেক্টেড রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।

রামেক হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ড সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে চলতি মাসের জানুয়ারির প্রথম ১২ দিনে ৬২ জন ভর্তি হয়েছে। ভর্তি রোগীর মধ্যে নারী ৩২ ও ৩৫ জন পুরুষ। 

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী বলেন, করোনার ভারতীয় ধরন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে ওমিক্রন ৫ গুণ কম ক্ষমতাসম্পন্ন বলে বলা হচ্ছে। কিন্তু এটি দ্রুত বাতাস কিংবা অন্য কোনও মাধ্যমে ছড়িয়ে যায়। এজন্য এটি সবচেয়ে বেশি ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সঙ্গত কারণেই রামেক হাসপাতালের করোনা ইউনিটকে ওমিক্রন মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কেননা, হয়তো অদূর ভবিষ্যতে ডেল্টা ভেরিয়েন্টের মত দ্রুত ছড়িয়ে যেতে পারে।

হাসপাতাল পরিচালক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী আরও বলেন, হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে প্রায় ৭০০ সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন রয়েছে। হাইফ্লোনেজাল ক্যানুলা রয়েছে, অক্সিজেন কনসান্ট্রেটর রয়েছে ৩০০ টি। এক হাজার ৪০০টি অক্সিজেন সিলিন্ডার এবং ২৪টি বাইপেপ রয়েছে।  এছাড়া রয়েছে এক হাজার লিটারের একটি ভিআই ট্যাংক। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এই ভিআই ট্যাংকটি তিন হাজার লিটারে উন্নীত করা হবে।

তিনি আরও বলেন,আপাতত করোনা ওয়ার্ডে (২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড) প্রশিক্ষিত দুটি চিকিৎসক টিম (১৬ জন) কাজ করছে। এছাড়া করোনা কেবিনে ১২ জন ডাক্তার চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়া পর্যাপ্ত নার্সও সেখানে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। ওমিক্রনের সংক্রমণ বেড়ে গেলে সেখানে প্রয়োজন অনুযায়ী ডাক্তার-নার্স সংযোজন করা হবে।

রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার বলেন, করোনা আক্রান্তের হার বিবেচনায় রাজশাহী ইয়েলো জোনে রয়েছে। আক্রান্তের হার যাতে বাড়তে না পারে সেজন্য সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের রয়েছে। এছাড়া ওমিক্রন মোকাবিলায় আগে থেকেই বাড়তি সতকর্তা অবলম্বন করা হচ্ছে।