রামেক হাসপাতালে করোনা ইউনিটে আরও ৩ জনের মৃত্যু



রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আরও তিন জন মারা গেছেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার (২৪ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সকাল ৯টার মধ্যে মারা যান তারা। এই তিন জনের মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। অন্য দুই জন করোনার উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। এদের মধ্যে একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং একজন রাজশাহীর বাসিন্দা।

রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালে করোনা সংক্রমণে একজন রোগী মারা গেছেন। এছাড়া করোনার উপসর্গ নিয়ে আরও দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। হাসপাতালের আইসিইউ, ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ড এবং কেবিনে একজন করে মারা গেছেন।

রাজশাহীতে ৫৫ দশমিক ৭৮ শতাংশ নমুনায় করোনা শনাক্ত হয়েছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) ও রামেক হাসপাতালের আরটি-পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষায় এই করোনা শনাক্ত হয়।

এদিকে, ১০৪ শয্যার রামেক করোনা ইউনিটে মঙ্গলবার সকাল ৯টা পর্যন্ত রোগী ভর্তি ছিলেন ৪৩ জন। এক দিন আগেও এই সংখ্যা ছিল ৫১ জন। বর্তমানে রাজশাহীর ২৩ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জের চার জন, নওগাঁর পাঁচ জন, নাটোরের দুই, পাবনার ও কুষ্টিয়ার তিন জন করে, সিরাজগঞ্জ-ঝিনাইদহ ও মেহেরপুরের একজন করে রোগী হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

হাসপাতালে করোনা নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ২৯ জন। করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি রয়েছেন ১৩ জন। করোনা ধরা পড়েনি ভর্তি একজনের। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি হয়েছেন চার জন। এই এক দিনে সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ১৩ জন রোগী।

এদিকে করোনা আক্রান্তের ভয়াবহতার দিক দিয়ে রাজশাহী রেডজোনে। জেলায় প্রতিদিনই করোনা শনাক্তের হার বাড়ছে। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে উপসর্গ নিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় তিন জন মারাও গেছে। এরপরও সাধারণ মানুষের মাঝে নেই সচেতনতা। রাজশাহীজুড়ে সরকারি বিধি-নিষেধ কিংবা স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা একেবারেই অনুপস্থিতির কারণেই শনাক্তের এই হার প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলছেন সংশ্লিষ্টরা। 

মহানগরীর কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানার বালাই ছিল না। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, মার্কেট, দোকানপাট, রাস্তাঘাট, গণপরিবহন সব ক্ষেত্রেই যেন চরমভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। আগের মতো স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে জনসাধারণকে রাস্তাঘাট, খোলাবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে চলাচল করতে দেখা গেছে। 

মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) সকালে নগরীর সাহেব বাজার, আরডিএ মার্কেট, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন শপিংমল ও খোলা বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতাদের স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষা করে উপচে-পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এসময় অনেককেই মাস্ক ছাড়া ঘোরাফেরা এবং ব্যবসা-বাণিজ্য করতে দেখা গেছে। নগরীর খাবারের দোকান, হোটেল, রেস্টুরেন্টেও নেই কোনো বিধি-নিষেধ মানার প্রবণতা। 

গণপরিবহন তথা বাসে অর্ধেক যাত্রী নিয়ে চলাচলের বিধান থাকলেও মঙ্গলবার নগরীর শিরোইল বাস টার্মিনাল, ভদ্রা বাস টার্মিনালে আসন সংখ্যার চেয়ে অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। অনেকের মুখে ছিল না কোনো মাস্ক। শুধু মহানগরীর অভ্যন্তরেই নয়। জেলার বাকি ৯ উপজেলাতেও একই অবস্থা।

রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, জনগণ ধরেই নিয়েছে ওমিক্রনে মানুষ আক্রান্ত হলেও হাসপাতালে ভর্তি হওয়া লাগছে না কিংবা মারা যাচ্ছে না। এ জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানতে মানুষের মধ্যে বেশ অনীহা তৈরি হয়েছে। কিন্তু জনগণের এমন ধারণা ভুল। কারণ করোনা যেকোনও সময় মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে। তা না হলে শুধু ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে মোবাইলকোর্ট বসিয়ে  কিংবা তথ্য অধিদফতর থেকে মাইকিং করিয়ে কোনও লাভ হবে না। স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় জরিমানা করা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে সচেতন করতে নিয়মিত মাইকিংও করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।