চেক জালিয়াতি মামলার আসামির জামিনে আরও বড় জালিয়াতি

ব্যাংকে টাকা জমার চালান জালিয়াতি করে জয়পুরহাট আদালত থেকে আসামিকে জামিনের ঘটনায় চার জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারির নির্দেশ দিয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে জয়পুরহাট যুগ্ম ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক কামরুল হাসানের পক্ষে সেরেস্তাদার মো. আব্দুল হান্নান বাদী হয়ে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। আদালতের বিচারক আব্দুল্লাহ আল মামুন মলাটি আমলে নিয়ে আসামিদের বিরুদ্ধে সমন জারি করে ৩ ফেব্রুয়ারি আদালতে হাজিরের আদেশ দেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জয়পুরহাট আদালতের সরকারি কৌঁসুলি নৃপেন্দ্রনাথ মন্ডল।

মামলার আসামিরা হলেন- জয়পুরহাট সদর উপজেলার পাঁচুর চক গ্রামের হারেজ উদ্দিনের ছেলে সোহেল রানা ও তার বোন পারুল বেগম, বড় ভাই আব্দুল করিম কাজী এবং আইনজীবী রেজাউল করিমের মুহুরি পাঁচবিবি উপজেলার রসুলপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের ছেলে আজিজার রহমান।

সংশ্লিষ্ট আদালত ও আইনজীবী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, দুই ব্যবসায়ী আরমান হাবিব ও সোহেল রানার বিরুদ্ধে আদালতে পৃথকভাবে প্রায় ৬০ লাখ টাকার দুটি চেক জালিয়াতির মামলা করা হয়। আরমান হাবিবের বিরুদ্ধে করা মামলার বাদী শাহ মো. কামরুল হাসান ও সোহেল রানার মামলার বাদী আমানুল্লাহ। সংশ্লিষ্ট আদালত দুই আসামিকে এক বছর করে কারাদণ্ড ও চেকে উল্লিখিত সমপরিমাণ টাকা জরিমানা করেন। তারা কারাগারেও ছিলেন।

গত বছরের ১১ নভেম্বর আইনজীবী রেজাউল করিম আরমান হাবিবের জরিমানার ৩০ লাখের অর্ধেক ১৫ লাখ টাকা জমার সোনালী ব্যাংকের ১০৩ নম্বর চালান অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জমা দেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিনই আদালত আরমান হাবিবকে জামিন দিয়েছেন। অপর আসামি সোহেল রানার মামলার সমপরিমাণ জরিমানার ২৮ লাখ ১৬ লাখ টাকার অর্ধেক ১৪ লাখ আট হাজার টাকা সোনালী ব্যাংকের ৮৩ নম্বর চালান দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে জমা দেন তার আইনজীবী আনিছুর রহমান। ২৮ নভেম্বর আসামি সোহেল রানা আদালত থেকে জামিনে পেয়ে কারাগার থেকে ছাড়া পান।

তবে বাদীপক্ষের আইনজীবীরা চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে চালান মূলে ব্যাংক ও আদালতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, আদালতে জমা দেওয়া ১০৩ নম্বর ও ৮৩ নম্বর ব্যাংকের চালানে কোনও ব্যাংকে টাকা জমা করা হয়নি। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীরা নিজেদের দায় এড়াতে তৎপর হয়ে ওঠেন। তারা দুই আসামির জামিন বাতিল চেয়ে আবেদন করেন। সংশ্লিষ্ট আদালত ওই আইনজীবীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে দুই আসামির জামিন আদেশ বাতিল করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। ব্যাংকের চালান জালিয়াতির ঘটনায় সোহেল রানার আইনজীবী অ্যাডভোকেট আনিছুর রহমান বাদী হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি জয়পুরহাট সদর থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় সোহেল রানার বড় ভাই আব্দুল করিম বোন পারুল বেগম ও আলম বাবু ওরফে নসু বাবুসহ অজ্ঞাত আরও ৩-৪ জনকে আসামি করা হয়। পুলিশ সোহেল রানার বড় ভাই আব্দুল করিমকে গ্রেফতার করে। তিনি এখন কারাগারে আছেন।

বৃহস্পতিবার আদালতে করা মামলা সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২৮ নভেম্বর জয়পুরহাট যুগ্ম ও দায়রা জজ আদালত থেকে ১৪ লাখ আট হাজার টাকার ভুয়া চালান দেখিয়ে কারাগারে থাকা দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সোহেল রানাকে জামিন করিয়ে নেন আইনজীবী আনিসুর রহমান। ওই ঘটনায় বৃহস্পতিবার দুপুরে যুগ্ম দায়রা জজ আদালতের পক্ষে চার জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করা হয় জয়পুরহাট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।