রামেক হাসপাতালে একদিনেই ৪ জনের মৃত্যু

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের করোনা ইউনিটে গত ২৪ ঘণ্টায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) সকাল ৯টা থেকে শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সকাল ৯টার মধ্যে তাদের মৃত্যু হয়।

দেশে করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের সংক্রমণ শনাক্তের পর রামেক হাসপাতালে একদিনে মৃত্যুর সর্বোচ্চ রেকর্ড এটি। বর্তমানে রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণের হার ৬৪ দশমিক ৫২ শতাংশ।

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় রামেক হাসপাতালে করোনা সংক্রমণে দুই রোগী মারা গেছেন। এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন আরও দুজন। এদের মধ্যে হাসপাতালের ২৯ ও ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে মারা গেছেন তিন জন। এ ছাড়া আইসিইউতে মারা গেছেন অন্যজন। দুজন নারী ও দুজন পুরুষ।

তিনি আরও জানান, করোনা ইউনিটে থাকা ১০৪ শয্যার বিপরীতে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত ৫১ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। এর মধ্যে রাজশাহীর ২৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৭, নওগাঁর ৩, নাটোরের ৩, পাবনার ৩, কুষ্টিয়ার ৩, সিরাজগঞ্জের ১, রাজবাড়ীর ১, ঝিনাইদহের ১ এবং মেহেরপুরের একজন রোগী রয়েছেন। এর মধ্যে করোনা আক্রান্ত রোগী ভর্তি রয়েছেন ২৮ জন। আর করোনা উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছেন ২০ জন রোগী। এ ছাড়া করোনা ধরা পড়েনি এমন রোগী ভর্তি আছেন আরও তিন জন।

এদিকে, শুক্রবার (২৮ জানুয়ারি) রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের আরটি-পিসিআর ল্যাবে ১৮৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়। এতে ১২০ জনের শরীরে করোনা ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। তারা প্রত্যেকই রাজশাহী জেলার বাসিন্দা। পরীক্ষার অনুপাতে বর্তমানে রাজশাহী জেলায় করোনা শনাক্তের হার ৬৪ দশমিক ৫২ শতাংশে।

রাজশাহী জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল বলেন, ‘ভ্যাকসিন শরীরকে শেখায় কীভাবে কোভিডের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হবে। কিন্তু ওমিক্রন মোকাবেলায় বিদ্যমান ভ্যাকসিন যথাযথভাবে কাজ না করলেও বুস্টার ডোজ ইতিবাচক ফল দিচ্ছে। বুস্টার ডোজের মাধ্যমে অধিক অ্যান্টিবডি তৈরি হয়ে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ সম্ভব। কারণ অধিক অ্যান্টিবডি ভাইরাসকে নতুন সেলে প্রবেশে বাধা দেয়।’

তিনি বলেন, ‘ওমিক্রন কিংবা কোভিডের মারাত্মক অসুস্থতায় আশানুরূপ প্রতিরোধ সক্ষমতা রয়েছে বুস্টার ডোজে। সবকিছু পর্যালোচনা করেই করোনার লাগাম টানতে এরমধ্যেই রাজশাহীতে বুস্টার ডোজ শুরু হয়েছে। যারা বুস্টার ডোজ নিয়েছেন তাদের ওমিক্রনে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি খুবই কম।’

রাজশাহী সিভিল সার্জন ডা. আবু সাইদ মোহাম্মদ ফারুক বলেন, ‘বর্তমানে করোনা প্রতিরোধে ভ্যাক্সিনেশন কার্যক্রমকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ এটা সংক্রমণ প্রতিরোধে অন্যতম প্রধান হাতিয়ার। আমাদের কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ টিকা মজুত আছে। বুস্টার ডোজ ভালো ফল দিচ্ছে। এটি করোনা আক্রান্ত রোগীর মারাত্মক শারীরিক জটিলতা রুখে দিতে বেশ কার্যকর।’

তিনি জানান, রাজশাহী জেলায় ১৯ লাখ ৫৩ হাজার ২৫৪ জন প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১২ লাখ ২৭ হাজার ৮১১ জন। এ ছাড়া ২৬ হাজার ৭৮২ জন মানুষকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হয়েছে। দুই লাখ ৬৩ হাজার ৬১৯ শিক্ষার্থীকে এ পর্যন্ত টিকার আওতায় আনা হয়েছে। করোনা প্রতিরোধে বাকিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে টিকা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। রাজশাহীতে বর্তমানে এক লাখ ৫৯ হাজার ৩৮৭ ডোজ টিকা মজুত আছে।

এদিকে, রাজশাহীতে করোনা সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সন্ধ্যার পর দোকানপাট বন্ধ রাখার গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে জেলা প্রশাসন। নতুন নির্দেশনা অনুযায়ী, শনিবার রাত ৮টা থেকে রাজশাহী জেলার সব বিপণিবিতান, শপিংমল, বিনোদনকেন্দ্র, রেস্তোরাঁসহ সব ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা এসেছে।