নওগাঁয় ‘হিজাব’ নিয়ে গুজব ছড়ানো ব্যক্তিরা চিহ্নিত

নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের মারধরের অভিযোগ তুলে হামলার ঘটনা তদন্তে গঠিত কমিটি প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।

মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) চার পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মহাদেবপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিজানুর রহমান।

ইউএনও বলেন, বিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক আমোদিনী পালকে ফাঁসানোর জন্য ভিন্নখাতে প্রবাহিতের চেষ্টা করা হয়েছে। যারা এই গুজব ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এছাড়া গত ৭ এপ্রিল বিদ্যালয়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন ব্যক্তি হামলা চালিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে। 

আরও পড়ুন: হিজাব বিতর্ক তুলে আমোদিনী পালকে ফাঁসানো হয়েছে: তদন্ত কমিটি

তিনি আরও বলেন, স্কুলড্রেস না পরে আসায় শিক্ষিক আমোদিনী পাল ও শিক্ষক বদিউল আলম শিক্ষার্থীদের মারধর করেন। অথচ প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ শুধু আমোদিনী পালকে শোকজ করেন। এই ঘটনা তদন্ত কমিটির কাছে উদ্দেশ্যমূলক মনে হয়েছে। ধরণী কান্তের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

মিজানুর রহমান জানান, কিছু ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা গেছে যারা গুজব ছড়িয়েছে। তবে এই মূহূর্তে নাম বলা যাচ্ছে না। আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হলে সবাই জানতে পারবে। তদন্ত কমিটি যেসব পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশ দিয়েছে সেগুলো আমলে নিয়ে এই ঘটনায় যেখানে যেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন তা করা হবে।

স্থানীয়দের দাবি, ওই প্রতিষ্ঠানে সাত জন শিক্ষক এবং তিন জন কর্মচারী নিয়োগে প্রায় কোটি টাকা বাণিজ্য ও অ্যাডহক কমিটি গঠনে অনিয়মসহ প্রধান শিক্ষকের বিভিন্ন দুর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্তের মাধ্যমে বিচার করতে হবে। পাশাপাশি গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের শুপারিশ তারা দ্রুত বাস্তবায়ন চায়। তদন্ত প্রতিবেদনটি যেনও কোনোভাবেই কাগজের চাপায় আটকে না যায়। 

আরও পড়ুন: ‌‘প্রধান শিক্ষকের লুটপাট ও অনিয়ম ঢাকতেই হিজাব বিতর্ক’

আমোদিনী পাল বলেন, ‘বিদ্যালয়ে হামলার সময় অনেকেই ফেসবুকে লাইভ করেছেন। এখনও ফেসবুকে সেই সব ভিডিও ঘুরে বেড়াচ্ছে। ভিডিও ছাড়াও হামলারকারীদের অনেককে চেনা সম্ভব। তারপরও হামলাকারী সবাইকে অজ্ঞাত উল্লেখ করে জিডি করা হলো, এটা আমার বোধগম্য হচ্ছে না।’

নিয়োগ বাণিজ্যের বিষয়ে প্রধান শিক্ষক ধরণী কান্ত বর্মণ বলেন, ‘নিয়োগের জন্য কারও কাছ থেকে টাকা নিইনি এবং কোনও দুর্নীতির সঙ্গে আমি জড়িত না।’

গত বুধবার (৬ এপ্রিল) জাতীয় সংগীত চলাকালে বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষিকা আমোদিনী পাল স্কুলড্রেস পরে না আসায় কয়েকজন ছাত্রীকে মারধর করেন। এ সময় বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক বদিউল আলম অষ্টম শ্রেণির তিন ছাত্রীকে মারধর করেন। পরে হিজাব পরায় বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মারধর করা হয়েছে অভিযোগ তোলেন স্থানীয়রা। 

আরও পড়ুন: ‌স্কুলড্রেস পরে না আসায় ১৮ ছাত্রীকে মারধরের অভিযোগ

এ ঘটনার জেরে বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ে হামলা চালিয়ে আসবাব ভাঙচুর করে স্থানীয়রা। এরপর ঘটনা তদন্তে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বৃহস্পতিবার উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছিল।