তরুণীকে ধর্ষণচেষ্টা, অপমানে আত্মহত্যা

বগুড়ার ধুনট উপজেলায় ধর্ষণচেষ্টার শিকার এক তরুণী (১৭) বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (১৪ এপ্রিল) রাতে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় ওই তরুণীর বাবা রাতেই ধুনট থানায় ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) বিকালে মামলার প্রধান আসামি বাবুল মিয়াকে (৪০) গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ওই তরুণী এবার স্থানীয় জালশুকা হাবিবুর রহমান ডিগ্রি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসি পাস করেছেন।

স্থানীয়রা জানায়, চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের রুদ্রবাড়িয়া গ্রামের বাবুল মিয়া দুই বছর ধরে ওই তরুণীকে কুপ্রস্তাব ও উত্ত্যক্ত করে আসছিল। ভুক্তভোগীর বাবা এ ব্যাপারে গ্রামের মাতবরদের কাছে নালিশ করলেও লাভ হয়নি। বিচার চাওয়ায় বাবুল আরও ক্ষুব্ধ হয়। 

গত ১২ এপ্রিল সকাল ৯টায় বাড়িতে কেউ না থাকায় বাবুল ও তার সহযোগী রফিকুল ইসলাম ওই তরুণীর বাড়িতে প্রবেশ করে। তারা ধারালো অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। নিজেকে রক্ষায় চিৎকার করতে থাকলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। এ সময় বাবুল ও রফিকুল পালিয়ে যায়। ঘটনাটি জানাজানি হলে লজ্জায় বিষপান করেন ওই তরুণী। পরিবারের সদস্যরা তাকে প্রথমে ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। চিকিৎসকের পরামর্শে পরদিন ১৩ এপ্রিল তাকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে তিনি মারা গেছেন।

ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, ধর্ষণচেষ্টার পরপরই ধুনট থানায় বাবুল ও রফিকুলসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেন তরুণীর বাবা। কিন্তু পুলিশ অভিযোগটি আমলে নেয়নি। বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহী মেডিক্যালে মারা যাওয়ার খবর পেয়ে পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে।

ভুক্তভোগীর বাবা বলেন, ‘মেয়েকে উত্ত্যক্তের বিচার চেয়ে গ্রামের মাতবরদের শরণাপন্ন হলেও তাদের সাড়া মেলেনি। থানায় অভিযোগ করা হলেও পুলিশ খোঁজ নেয়নি। বখাটেদের কারণে আর কোনও মেয়েকে যেন জীবন দিতে না হয়।’

ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা জানান, ওই তরুণীর বাড়ির পাশে রাস্তার কাজ চলছে। রাস্তায় থাকা খুঁটি সরানো নিয়ে তাদের সঙ্গে ঠিকাদারের লোক বাবুল মিয়ার বাগবিতণ্ডা হয়। তখন ওই তরুণী মোবাইল ফোন দিয়ে বাবুলের ভিডিও করছিলেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে আরও বাগবিতণ্ডা হয়। এরপর বাড়িতে ঢুকে ধর্ষণ চেষ্টা করেছে কিনা জানা নেই। বিষপানে অসুস্থ ওই তরুণী বৃহস্পতিবার রাতে রাজশাহীতে মারা গেছে। এরপর তার বাবা ছয় জনের বিরুদ্ধে মামলা দিলে তা রেকর্ড করা হয়েছে।

অভিযোগ আমলে না নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে ওসি বলেন, শুক্রবার বিকালে প্রধান আসামি বাবুলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে। এছাড়া ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।