‘কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে সাপ’ পেলো পুলিশ

বগুড়ার কাহালুতে একরাম হোসেন সরদার বগা নামে এক যুবকের দুই পায়ে গুলির ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে পাঁচটি বন্দুক তৈরির সরঞ্জাম পেয়েছে পুলিশ। শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) রাতে উপজেলার শিব কলমা গ্রামে অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার ও এসব রাখার দায়ে বাবা ও ছেলেকে গ্রেফতার করেছে।

শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী জানান, ঈদ ও রোজায় সন্ত্রাসীরা যাতে কোনও প্রভাব ফেলতে না পারে সে জন্য পুলিশ ব্যাপক তৎপর ছিল। কাহালুতে বগা নামে এক যুবকের দুই পায়ে গুলির ঘটনার অনুসন্ধান করতে গিয়ে ‘কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়েছে’। পাঁচটি একনলা বন্দুক তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার ও এসব হেফাজতে রাখায় বাবা ও ছেলেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এসব অস্ত্রের উৎস অনুসন্ধানে কাহালু থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবি পুলিশও কাজ করবে।

গ্রেফতার বাবা-ছেলে হলেন- বগুড়ার কাহালু উপজেলার কলমা শিবা গ্রামের মৃত দেবেন্দ্রনাথ প্রামানিকের ছেলে নিলু চন্দ্র প্রামানিক (৪৫) ও তার ছেলে সঞ্জিত চন্দ্র প্রামানিক (২২)। এর আগে বগাকে গুলির ঘটনায় শিব কমলা গ্রামের আকরাম হোসেন বাবলুর ছেলে শামীম হোসেনকে (৩০) গ্রেফতার করা হয়।

উদ্ধার হওয়ার বন্দুক তৈরির সরঞ্জাম

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, একরাম হোসেন সরদার বগা সিমেন্টের খুঁটি তৈরি কারখানার শ্রমিক। তিনি কাহালু উপজেলার শিব কমলা গ্রামের মৃত মফিজ উদ্দিনের ছেলে। গত বৃহস্পতিবার রাত ২টার দিকে সিগারেট কেনার জন্য গ্রামের মুদি দোকানে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে দুর্বৃত্তরা তাকে থামিয়ে দুই হাঁটুর ওপরে গুলি করে পালিয়ে যায়। গ্রামবাসীরা রাত পৌনে ৩টার দিকে আহতকে উদ্ধার করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে ভর্তি করে দেন। এ ঘটনায় বগার স্ত্রী কুলসুম খাতুন কাহালু থানায় শামীম হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করলে তাকে গ্রেফতার করা হয়। সহকর্মী শামীমের সঙ্গে বগার বিরোধ ছিল।

এদিকে, গুলি করা এবং অস্ত্রের উৎস জানাতে কাহালু থানা পুলিশ মাঠে নামে। সন্দেহভাজন হিসেবে শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে শিব কমলা গ্রাম থেকে নিলু চন্দ্র প্রামানিক ও তার ছেলে সঞ্জিত চন্দ্র প্রামানিককে গ্রেফতার করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা তাদের বাড়িতে অন্তত পাঁচটি একনলা বন্ধুক তৈরির সরঞ্জাম থাকার কথা স্বীকার করেন। রাতেই তাদের দক্ষিণপাশে বাথরুমের কাছে মাটির নিচ থেকে বাজারের ব্যাগে পলিথিনে মোড়ানো অবস্থায় একনলা বন্দুক তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম পাওয়া যায়। উদ্ধার করা সরঞ্জামগুলো হলো- একনলা বন্দুক তৈরির ব্যারেল পাঁচটি, লোহার রিকয়েলিং স্প্রিং তিনটি, ফায়ারিং পিন ছয়টি, বন্দুকের ট্রিগার ছয়টি, বন্দুক তৈরির স্টিলের খাপ পাঁচটি, স্টিলের নল চারটি, বিভিন্ন সাইজের লোহার পাত ১৯টি, ব্যারেলের অংশ একটি, লোহার খাঁজকাটা রড তিনটিসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশ।

কাহালু থানার ওসি আমবার হোসেন জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে দুটি গ্রুপের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এর জেরে বগার দুই পায়ে গুলি করা হয়েছে। তার পায়ে বন্দুক দিয়ে গুলি করা হয়েছে। তাকে গুলি ও অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় যোগসূত্র রয়েছে। এ ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে বন্দুকের সরঞ্জাম পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় এলাকার অনেকে জড়িত আছে। অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায় কাহালু থানার এসআই মহিউদ্দিন নিলু চন্দ্র প্রামানিক ও তার ছেলে সঞ্জিত চন্দ্র প্রামানিকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। শনিবার বিকালে তাদের বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া অন্য আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।