বিশ্রামের ফুরসত নেই রাজশাহীর বিক্রেতাদের

দিনের বেলায় প্রচণ্ড গরমে ঈদ বাজার তেমন একটা জমে উঠছে না। তবে সন্ধ্যা নামতেই রাজশাহীতে উপচে পড়া ভিড় নামছে বাজারে। ক্রেতাদের আনাগোনায় সরগরম থাকছে পুরো বাজার। এতে প্রধান সড়কগুলোতেও যানজট দেখা যাচ্ছে।

রাজশাহীর ব্যবসায়ীরা বলছেন, করোনার কারণে গত দুই বছর ব্যবসা তেমন হয়নি। তাই এ বছর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। প্রচণ্ড গরমে দিনের বেলা বেচাবিক্রি কম হচ্ছে। কিন্তু ইফতারির পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত বেচাকেনা চলছে। আর অন্য বছরের তুলনায় এবার নতুন ডিজাইনের অনেক পোশাক এসেছে। কাপড়ের মানও ভালো। সবমিলিয়ে, পোশাকের দামও কিছুটা বেশি।

বুধবার (২৭ এপ্রিল) নগরীর কোর্ট বাজার, সাহেব বাজার আরডিএ মার্কেট, নিউমার্কেট ও হকার্স মার্কেট, গণকপাড়া, জলিল সুপার মার্কেটসহ বেশ কয়েকটি শপিং ও শো-রুম ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।

Rajshahi-Eid-Bazar5

তবে সাহেব বাজারের আরডিএ মার্কেটে তুলনামূলক বেশি ভিড় দেখা গেছে। শাড়ি, থ্রি-পিস, বোরকা, জুতা-স্যান্ডেল, কসমেটিকস থেকে শুরু করে সবকিছুই এক ছাদের নিচে পাওয়ায় ক্রেতা-সমাগম বেশি থাকছে। ছেলেদের নিত্যনতুন ডিজাইনের পাঞ্জাবি, জিন্স, টি-শার্ট এবং থান কাপড়ের দোকান থাকায় এই মার্কেটে ছেলেদের ভিড়ও চোখে পড়ার মতো। ভিড় আছে হকার্স মার্কেটেও।

নারী ও শিশুদের নিত্যনতুন ফ্রক, স্কার্ট, লেহেঙ্গা, টু-পিস, থ্রি-পিস ও বোরকা বিক্রি হচ্ছে আরডিএ মার্কেটের মডার্ন গার্মেন্টসে। দোকানের ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের জানান, ঈদ উপলক্ষে গত বছর ৫/৬ লাখ টাকার মালামাল তুলেছিলেন। নতুন ও পুরাতন মিলে বিক্রি হয়েছিল প্রায় আট লাখ টাকার। এবার রোজার শুরু থেকে প্রায় ১২-১৩ লাখ টাকার বেচাকেনা হয়েছে।

Rajshahi-Eid-Bazar2

আরডিএ মার্কেটের পোশাক ব্যবসায়ী ওয়াসিউর রহমান রানা বলেন, ‘রোজার প্রথম দিন থেকেই বেচাবিক্রি বাড়তে শুরু করেছে। ঈদের মাত্র কয়েকদিন বাকি। এখন বেচাকেনা জমজমাট। জিরানোর সময় নেই।’

এদিকে, জমে উঠেছে সিল্ক শো-রুমের ঈদের কেনাকাটা। নগরীর বিসিক এলাকার সিল্ক কারখানা ও সিল্ক শো-রুমগুলো ঘুরে দেখা যায়, আসন্ন ঈদকে সামনে রেখে বিচিত্র ডিজাইনের সিল্কের পোশাক শো-রুমগুলোতে স্থান পেয়েছে।

সিল্ক শো-রুম ব্যবসায়ীরা বলছেন, দুই ঈদে কাপড়ের বেচাবিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়। যে কারণে এই দুই ঈদকে সামনে রেখে তাদের প্রস্তুতিও ভালো থাকে। এ সময় ক্রেতাদের পোশাকে নতুন কিছু দেওয়ার প্রয়াস থাকে। এবারও ডিজাইনে এমন কিছু বিষয় আছে। মসলিন, বলাকা সিল্ক, অ্যান্ডিসহ যতপ্রকার সুতা আছে এর মধ্যে মসলিনের চাহিদা সবচেয়ে বেশি থাকে। এবারও একই।

Rajshahi-Eid-Bazar-1

রাজশাহীতে ‘সপুরা সিল্ক মিলস লিমিটেডের’ সবচেয়ে বড় সিল্ক শো-রুমে ক্রেতাদের সরগরম উপস্থিতি দেখা গেছে। এই প্রতিষ্ঠানের শো-রুম ম্যানেজার সাইদুর রহমান জানান, বিক্রি জমে উঠেছে। পাইকারি-খুচরা দুই ধরনের ক্রেতারাই আসছেন। বেচাবিক্রিও ভালো হচ্ছে।

তিনি জানান, তাদের শো-রুমে মসলিনের পাঞ্জাবি ও শাড়ির বিক্রি সবচেয়ে বেশি। পাঞ্জাবি দুই হাজার থেকে শুরু করে ৩৫ হাজার টাকা পর্যন্ত রয়েছে। থ্রি-পিস সাড়ে চার হাজার থেকে শুরু করে ২০ হাজারের ওপরেও রয়েছে। শাড়ি দুই হাজার ১৫০ থেকে শুরু করে ২৫ হাজার টাকার ওপরেরও রয়েছে।

সিল্কের পোশাক কিনতে আসা রুমা খাতুন বলেন, ‘ঈদের সময় যত ঘনিয়ে আসবে শো-রুমে ক্রেতাদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। এবারও তেমন। ভিড়ের মধ্যে সিল্কের পাঞ্জাবি এবং মেয়ের জন্য থ্রি-পিস কিনলাম। দাম এবার বেশি।’

Rajshahi-Eid-Bazar4

এদিকে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে কেনাকাটায় বাজারমুখী মানুষের সমাগম বাড়ছে। দুপুরের তীব্র গরমে সমাগম কম থাকলেও বিকেল নামতেই বাড়ছে ভিড়। এ সময় নগরীর প্রধান প্রধান সড়কে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তায় যানবাহনের ভিড় ঠেলে বাজারে গিয়ে মানুষের ভিড় ঠেলতে হচ্ছে ক্রেতাদের।

বিকেলে নগরীর আলুপট্টি থেকে ফায়ার সার্ভিস মোড়, ঝাউতলা থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ, এএইচএম কামরুজ্জামান চত্বর থেকে সাহেববাজার রোডসহ প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে যানবাহনের জটলা বাঁধতে দেখা গেছে। তবে সবচেয়ে বেশি জটলা দেখা গেছে কোর্ট বাজার ও সাহেববাজার এলাকায়। এখানকার রাস্তার দুই পাশে দোকানিদের দৌরাত্ম্য এবং চালকদের স্বেচ্ছাচারিতায় যানজটে নাকাল হতে হচ্ছেন যাত্রীসহ পথচারীরা।

ব্যস্ততম সড়কের ফুটপাতসহ রাস্তাতেও পসরা সাজিয়ে বসছেন ব্যবসায়ীরা। এতে ফুটপাতসহ সড়কেও ক্রেতাদের জটলা তৈরি হচ্ছে। অপরদিকে, ইচ্ছামতো গাড়ি পার্কিং করছেন অনেকেই। এতে সড়কে যানজট তৈরি হচ্ছে। নগর ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদেরও মোড়গুলোতে যানজট নিরসনে ব্যস্ত সময় পার করতে দেখা গেছে।

Rajshahi-Eid-Bazar6

ঈদের কেনাকাটা করতে আসা আশফাকুর রহমান সুজন জানান, তীব্র গরমের কারণে দিনের বেলা বাজারে আসেননি। আবহাওয়া একটু স্বাভাবিক থাকবে ভেবে সকালের দিকে বাজারে এসেছিলেন। কিন্তু প্রতিটি মোড়ে মোড়ে গাড়ির দীর্ঘ লাইন দেখতে পেয়েছেন। এর মধ্যে বেলা বাড়ার সঙ্গে গরমও বৃদ্ধি পেয়েছে। বাজারে মানুষের ভিড় আর রাস্তায় গাড়ির দীর্ঘ লাইনে রোজা থেকে তিনি হাঁপিয়ে উঠেছেন।

তিনি আরও জানান, রাজশাহীর সড়কে সাধারণত যানজট হয় না। গাড়ি চালকদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে মাঝে মাঝেই এসব দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে।

ছোট দুই বাচ্চাকে নিয়ে ঈদের কেনাকাটায় আসা আশরাফ ও সুমাইয়া দম্পতি বলেন, ‘বিগত বছরগুলোর সঙ্গে তুলনা করলে রাজশাহী নগরীতে যানজট বাড়ছে। যদিও যানজট তেমন জটিল আকার ধারণ করেনি। কিন্তু এত প্রশস্ত রাস্তা থাকতে যানজটের কোনও প্রশ্নই আসে না। আর বাচ্চাদের নিয়ে এসে বাজার থেকে শুরু করে রাস্তাতেও কিছুটা দুর্ভোগে পড়তে হয়েছে।’