বাইকারদের দৌরাত্ম্য, ঝরেছে ৬ প্রাণ, হাসপাতালে ৩১৬

এবার ঈদের ছুটিতে রাজশাহীতে বাইকারদের আনন্দ উৎসব ও দৌরাত্ম্য ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে এই উৎসব নিরানন্দ হয়েছে ৩২২ পরিবারের। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ছয় জনের। আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরও ৩১৬ জন। যাদের অধিকাংশই বাইক দুর্ঘটনার শিকার তরুণ ও কিশোর। ১ মে থেকে ৬ মে পর্যন্ত রাজশাহীতে সড়ক দুর্ঘটনার চিত্র এটি।

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, ১ মে থেকে ৪ মে পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে রামেক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ২১৯ জন। এর মধ্যে ১ মে ৩৪, ২ মে ৪৮, ৩ মে ৭২, ৪ মে ৬৫ জনকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া ৫ মে ৪২ এবং ৬ মে ৫৫ জন সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে কয়েকজন সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।

এদিকে, নগরীতে কিশোর ও তরুণ বাইকারদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে। প্রতিদিন আনন্দের নামে বেপরোয়াভাবে বাইক চালিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তারা। বেপরোয়াভাবে বাইক চালানোর প্রতিবাদ করায় তাদের হাতে হেনস্তার শিকার হওয়ারও অভিযোগ করেছেন নারীরা।

কিশোর ও তরুণ বাইকারদের দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে

স্থানীয়রা বলছেন, অপরিপক্ব হাতে বাইক চালিয়ে নিজে যেমন দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তেমনি পথচারীদেরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলছেন তারা। অনিয়ন্ত্রিত এসব বাইকারের কারণে নগরে যানজট তৈরি হচ্ছে। অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাচ্ছেন তারা। আইনও কাউকে পরোয়া করেন না বাইকাররা। তাদের কারও মাথায় হেলমেট নেই, লাইসেন্স নেই। সবাই চলাচল করে ইচ্ছেমতো।

গত ১০ দিনের নগর সড়ক পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, নগরীতে সৃষ্ট যানজটের একটি বড় কারণ কিশোর ও তরুণ বাইকারদের অনিয়ন্ত্রিত গাড়ি চালানো।  দলবেঁধে বাইক নিয়ে মহড়া দিয়ে নগর সড়কের বিভিন্ন স্থানে আড্ডায় মাতেন। নারীদের দেখলে উত্ত্যক্ত ও খারাপ আচরণ করেন তারা।

কোও কোনও তরুণ ও কিশোর বেপরোয়া বাইক চালানোর ভিডিও ধারণ করতে নিচ্ছেন বাড়তি ঝুঁকি। নগরীর কাশিয়াডাঙ্গা থেকে বহরমপুর, আলুপট্টি থেকে তালাইমারি, বিমান চত্বর থেকে মেহেরচন্ডীসহ আধুনিক আলোকসজ্জিত সড়কগুলোতে টিকটকারদের দৌরাত্ম্য ছিল বেশি।

তাদের কারও হেলমেট নেই, লাইসেন্স নেই। সবাই চলাচল করে ইচ্ছেমতো।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের ছুটিতে তরুণ ও কিশোরদের বেপরোয়া গাড়ি চালানো ও অশোভন আচরণ বেড়েছে। শুধু নগর সড়কেই নয়; জেলার বিভিন্ন সড়কেও বেপরোয়া আচরণ ছিল লক্ষণীয়। এতে উদ্বিগ্ন নগরবাসী। এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সচেতন নাগরিক সমাজ।

সাধারণ যাত্রী ও সচেতন নাগরিকরা বলছেন, সড়ক নিরাপদ রাখতে সরকারের আইন আছে। কিন্তু শুধু আইন দিয়ে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। কেউ কেউ আইন ভাঙতে পারলে খুশি হয়। কিশোররা সড়কে বাইক চালানোর নিয়মকানুন জানে না। তরুণরা জানলেও মানতে চায় না। এ কারণে দুর্ঘটনা বেশি ঘটেছে। কিছু উচ্ছৃঙ্খল কিশোর আছে, যারা গ্যাং তৈরি করেছে। তারা কাউকে মানে না। মন যা চায় তাই করে বেড়ায় তারা।

নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) আন্দোলনের রাজশাহী জেলা শাখার সভাপতি অ্যাডভোকেট তৌফিক হাসান টিটু বলেন, ‘করোনা পরবর্তী সময়ে নগরীর সড়কে কিশোর ও তরুণদের বেপরোয়া আচরণ বেড়েছে। এবার ঈদে উচ্ছৃঙ্খল হয়ে গেছে তারা। তাদের দৌরাত্ম্য উদ্বেগজনক। শুধু কিশোর নয়, উচ্চশিক্ষিত দাবি করা তরুণরাও বেপরোয়াভাবে বাইক চালাচ্ছে। নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা করে না। কোনও ধরনের আইন মানছে না তারা।’ 

আনন্দের নামে বেপরোয়াভাবে বাইক চালিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন তারা

তিনি আরও বলেন, ‘একজন কিশোরের আনন্দের জন্য তার হাতে হাইস্পিড বাইক তুলে দিচ্ছে পরিবার। এটি কাম্য নয়। কিশোর অপরাধ দমাতে আগে পরিবারকে সচেতন হতে হবে। পারিবারিক সুশিক্ষার অভাবে তারা বেপরোয়া আচরণ করছে। পরিবারের পাশাপাশি রাষ্ট্রকেও ভূমিকা রাখতে হবে। জনসচেতনতার জন্য প্রচার-প্রচারণা চালাতে হবে। শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে। এক্ষেত্রে ট্রাফিক বিভাগকে আরও সক্রিয় হতে হবে। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনকে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।’

এসব বিষয়ে রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. আবু কালাম সিদ্দিক বলেন, ‘এখন ঈদের ছুটি চলছে। ছেলেমেয়েরা ঘোরাঘুরি করছে। এই সময়ে অভিযান চালিয়ে ঈদ উৎসব নিরানন্দ করতে পারি না আমরা। তবে ঈদের ছুটি শেষ হয়ে গেলে তৎপরতা বাড়াবো। সেই সঙ্গে কাগজপত্র ও লাইসেন্সবিহীন চালক ও বাইকের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’