বাসটির বনেটে বসা ভাইবোনের লাশ মিললো চাকার নিচে

সকালে ছিল মামাবাড়ি টাঙ্গাইল যাওয়ার উল্লাস। পড়েছিল নতুন জামা। সঙ্গে ছিলেন মা হেলেনা বেগম আর মামা আবদুল জলিল। মামাবাড়ি যাওয়ার সময় এগিয়ে দিলেন বাবা। নাটোর সদর থেকে তুলে দিলেন ঢাকাগামী সিয়াম পরিবহনের বাসে। কিন্তু ওই বাসে সিট খালি না থাকায় বাধ্য হয়ে তাদের বসতে হয়েছে বনেটে। তবে বাসটি গন্তব্যে পৌঁছাতে পারেনি। ছাড়ায় কয়েক মিনিটের মধ্যেই দুর্ঘটনা শিকার হয়।

শনিবার (৭ মে) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া হাটিকুমরুল মহাসড়কের গাজী অটোরাইসমিল এলাকায় মুখোমুখি সংঘর্ষ হয় রাজশাহীগামী ন্যাশনাল পরিবহনের একটি বাসের সঙ্গে। এতে প্রাণ হারান সাত জন। মৃত্যুর এই মিছিলে যোগ হয়েছে সিয়াম পরিবহনের বনেটে বসা ভাইবোন কাওসার আহমেদ (১৮) ও সাদিয়া খাতুন (১৬)। একই দুর্ঘটনায় তাদের মা ও মামা আহত হয়েছেন।

তারা নাটোর সদর উপজেলার বড়হরিশপুর ইউনিয়নের পাইকেরদোল গ্রামের শাহজাহান আলী ও হেলেনা দম্পতির সন্তান। কাওসার সদর উপজেলার দিয়ারভিটা এলাকার দিয়ার বিএম কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী ছিল। অপরদিকে, সাদিয়া পাইকেরদোল উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।

পাইকেরদোল গ্রামের বাসিন্দা নিখিল কুমার জানান, প্রায় ১০ বছর ধরে শাহজাহান মালয়েশিয়া থেকে গত বছর একবারে বাড়ি ফেরেন। তার দুই সন্তান। আদরের ছিল তারা। বোন আর ভাগনে-ভাগনিকে ঈদ উপলক্ষে নিজ বাড়ি টাঙ্গাইলে নিয়ে যেতে ঈদের পর দিন নাটোর আসেন আব্দুল জলিল। শনিবার সকাল ১০টার দিকে শাহজাহান তাদের সিয়াম বাসে তুলে দিয়ে বাড়ি ফেরার ১০-১২ মিনিটের মধ্যেই খবর আসে ওই দুর্ঘটনার।

মামা জলিল ও মা হেলেনার বরাতে নিখিল জানান, সংঘর্ষের পর তারা চার জনই ছিটকে গাড়ির গেট দিয়ে রাস্তায় পড়ে যায়। এ সময় কাওসার আর সাদিয়া ওই বাসের চাকার নিচে পড়ে পিষ্ট হয়। পরে পুলিশ ও স্থানীয়রা চাকার নিচ থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে। বিকাল ৫টায় স্থানীয় গোরস্থানে তাদের দাফন করা হয়।

সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বড়াইগ্রাম উপজেলার বনপাড়া-হাটিকুমরুল মহাসড়কে এই দুর্ঘটনা ঘটে। দুই ভাইবোন ছাড়া নিহত বাকিরা হলেন– নাটোরের লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়া এলাকার রুহুল আমিনের স্ত্রী মোহনা আক্তার (৩০), সদর উপজেলার বড়হরিশপুর ইউনিয়নের পাইকোরদৌল এলাকার আলমগীর হোসেন (৪৮), টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার এলাকার ভানু প্রামাণিকের ছেলে জলিল (২৫), চাঁপাইনবাবগঞ্জের মশিউর রহমান (২৫) এবং মাগুরা সদর উপজেলার মিজানুর রহমান।