অবৈধ সম্পদ অর্জনে সাবেক এমপি জ্যোতির সাত বছরের কারাদণ্ড 

বগুড়ায় দুর্নীতির দায়ে সাবেক এমপি ও সমবায় দলের সভাপতি অধ্যক্ষ নূর আফরোজ বেগম জ্যোতিকে সাত বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন আদালত। জরিমানা অনাদায়ে তাকে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। এছাড়া আদালত অবৈধভাবে অর্জন করা ৫৩ লক্ষাধিক টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করেছেন। পরে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। বৃহস্পতিবার (১৯ মে) বগুড়ার স্পেশাল জজ এমরান হোসেন চৌধুরী এ রায় ঘোষণা করেন।

দুদকের স্পেশাল পিপি এসএম আবুল কালাম আজাদ এ রায়ে সন্তোষ জানিয়েছেন।

আসামি পক্ষের আইনজীবী আবদুল বাছেদ বলেন, অধ্যক্ষ জ্যোতি বিএনপির হাইপ্রোফাইল নেত্রী হওয়ায় সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা পরায়ণ হয়ে দুদকের মাধ্যমে এ মামলা করিয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, যে অভিযোগে সাজা দেওয়া হলো তা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। শিগগিরই উচ্চ আদালতে আপিল ও জামিনের উদ্যোগ নেওয়া হবে।

আদালত, দুদক ও স্থানীয় সূত্র জানায়, বগুড়া জেলা মহিলা দলের সাবেক সভাপতি, কেন্দ্রীয় মহিলা দলের সাবেক সহ-সভাপতি, জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা, ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত অষ্টম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য ও বর্তমানে সমবায় দলের সভাপতি নূর আফরোজ বেগম জ্যোতি বগুড়া শহরের উত্তর কাটনারপাড়ার প্রফেসর আবদুর রউফের স্ত্রী। 

শিবগঞ্জ এমএইচ ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ জ্যোতি ছাত্রজীবন থেকে বিএনপির রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তিনি গত ২০১৩ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ে ১৯৯৯ থকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তার অর্জিত স্থাবর, অস্থাবর সম্পতি ও দায়দেনার হিসাব বিবরণী দাখিল করেন। দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ২৮ লাখ ১৭ হাজার ১৮৪ টাকা মূল্যের সম্পদ অর্জনের মিথ্যা তথ্য দেন তিনি। অসাধু উপায়ে অর্জিত ও জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৫৩ লাখ ২২ হাজার ৭৯০ টাকা মূল্যের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন করে তা ভোগ দখল করেন বলে অভিযোগ উঠে। 

এ ঘটনায় দুদক বগুড়া সমন্বিত কার্যালয়ের সাবেক সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। তদন্ত শেষে ২০১৬ সালের ২২ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। 

দুদকের স্পেশাল পিপি এসএম আবুল কালাম আজাদ বলেন, অধ্যক্ষ নূর আফরোজ বেগম জ্যোতির বিরুদ্ধে ৫৩ লক্ষাধিক টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের তথ্য পাওয়া যায়। একই সঙ্গে তিনি ২৮ লাখ টাকার তথ্য গোপন করেছিলেন। মামলা হওয়ার পর গত ২০১৭ সালে বিচার কার্যক্রম শুরু হয়। গত ১১ মে মামলার যুক্তিতর্ক ছিল। এ সময় আসামি পক্ষের আইনজীবী সময় প্রার্থনা করেন। আদালত তা নামঞ্জুর করে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। 

বৃহস্পতিবার আদালত ২০০৪ সালের দুদক আইনের ২৬(২) তথ্য গোপনের মামলায় বিএনপি নেত্রী জ্যোতির দুই বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে তাকে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন। এছাড়া ২৭(১) ধারায় অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলায় পাঁচ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও অবৈধভাবে অর্জন করা ৫৩ লাখ ২২ হাজার ৭৯০ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করেন। দুটি সাজা একত্রে চলবে বলে জানান আদালত।