যমুনার চর ও নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

উজান থেকে নেমা আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে তিস্তা নদীর পানি বেড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে যমুনা নদীতেও। যমুনার পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ক্রমাগত বেড়ে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতেও পানি বাড়ছে। এতে ধীরে ধীরে প্লাবিত হচ্ছে যমুনার চর ও নিম্নাঞ্চল। বন্যা ও ভাঙন আতঙ্কে দিন কাটছে চরাঞ্চলের মানুষের।

জেলার কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানি বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় আরও ৪২ সেন্টিমিটার বেড়ে শহর বিপৎসীমার মাত্র চার সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে বন্যার আশঙ্কা করছেন নদী পাড়ের মানুষ। 

শনিবার (১৮ জুন) সকাল সাড়ে ৮টায় সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, জেলার কাজিপুর পয়েন্টে গত ১২ ঘণ্টায় (সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত) ৮ সেন্টিমিটার পানি বেড়ে বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল ৬টায় কাজিপুর পয়েন্টে যমুনার পানির স্তর রেকর্ড করা হয় ১৫ দশমিক ২৬ মিটার। আর এখানে পানির বিপৎসীমার স্তর ধরা হয় ১৫ দশমিক ২৫ মিটার। 

এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে অভ্যন্তরীণ নদ-নদীতেও পানি বাড়ছে। এতে ধীরে ধীরে প্লাবিত হচ্ছে যমুনার চর ও নিম্নাঞ্চল। পানি বাড়ায় চরাঞ্চলের মানুষের মাঝে বন্যা ও ভাঙন আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে। এসব এলাকায় পানিতে ডুবে নষ্ট হচ্ছে ফসল। 

যমুনার পানি বিপৎসীমার মাত্র চার সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পানি পরিমাপক হাসানুর রহমান জানান, সকালে শহরের হার্ড পয়েন্ট এলাকায় পানির স্তর রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৩১ মিটার। আর এখানে বিপৎসীমা ধরা হয় ১৩ দশমিক ৩৫ মিটার। 

প্রায় দশ দিন ধরে ধারাবাহিকভাবে পানি বৃদ্ধির ফলে চরাঞ্চলের নিচু জমিগুলো তলিয়ে যেতে শুরু করেছে। যমুনার পাশাপাশি ফুলজোড়, করতোয়া, বড়াল, হুড়াসগর ও ইছামতিসহ চলনবিলের পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে বিস্তীর্ণ ফসলি জমি প্লাবিত হওয়ায় কাঁচা পাট, তিল, কাউন, বাদাম ও শাক-সবজিসহ বিভিন্ন ধরনের উঠতি ফসল নষ্ট হচ্ছে। এতে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষকরা।

অপরদিকে, যমুনা পানি বৃদ্ধির ফলে কাজিপুর, চৌহালী, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুরের চরাঞ্চলে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে পানি উন্নয়ন বোর্ড।

সিরাজগঞ্জ পাউবো’র উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী নাসির উদ্দিন বলেন, ‘সিরাজগঞ্জ শহররক্ষা বাঁধসহ সব এলাকাতেই যমুনা নদীর পানি আবারও বাড়ছে। সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে সকাল ৬টায় যমুনার পানি বিপৎসীমার মাত্র চার সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। যেভাবে পানি বৃদ্ধি বাড়ছে তাতে ধারণা করা হচ্ছে, আজকের মধ্যেই বিপৎসীমা অতিক্রম করবে।’

পাউবো’র নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, যমুনা নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে নদীর তীরবর্তী এলাকায় বন্যা হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। তবে ভাঙনসহ যেকোনও পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত আছে সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড।