ফেসবুক লাইভের জেরে ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধরের অভিযোগ

ফেসবুক লাইভে এসে নাটোরের নলডাঙ্গায় উপজেলা চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ তুলে ধরার জেরে এক ছাত্রলীগকর্মীকে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে। একই সঙ্গে তাকে সুষ্ঠু চিকিৎসা না দেওয়ারও অভিযোগ তুলেছে তার পরিবার।

আহত ছাত্রলীগকর্মী জামিল আলিম জীবনের চাচা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা এসএম ফিরোজের অভিযোগ, বুধবার (২১ সেপ্টেম্বর) দুপুরে তার মাথায় অপারেশনের জন্য বের করার পরও তা না করে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। 

ঘটনার পর থেকে গত প্রায় ৪৮ ঘণ্টায়ও তাকে অজ্ঞান অবস্থায় রামেক আইসিইউতে রাখা হয়েছে দাবি করে এসএম ফিরোজ জানান, লাইফ সাপোর্ট রুমে দায়িত্বে থাকা ব্যক্তি তাদের জানিয়েছেন, তাকে আপাতত লাইফ সাপোর্টেই রাখতে হবে। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবেন।

জীবন নলডাঙ্গা উপজেলার রামশার কাজিপুর এলাকার ফরহাদ হোসেন শাহর ছেলে। বিবাহিত জামিলের ৪ মাস বয়সী একটি শিশু সন্তানও রয়েছে।

নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, ভুক্তভোগীর মা জাহানারা বেগম একটি এজাহার দাখিল করেন। এজাহারে তিনি উল্লেখ করেন, তার ছেলে জীবন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে ওই চেয়ারম্যান ক্ষিপ্ত হন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে স্থানীয় আমতলী বাজারে দুই ভাই ফয়সাল শাহ ফটিক ও আলিম আল রাজি শাহ কে সাথে নিয়ে জীবনকে মারপিট করতে থাকে ওই উপজেলা চেয়ারম্যান। লোহার রড, বাঁশের লাঠি ইত্যাদি দিয়ে তাকে প্রহার করা হয়। তাকে বাঁচাতে এগিয়ে গেলে তার স্বামী (জীবনের বাবা) ফরহাদ হোসেন শাহের মাথায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা হয়। পাঁচটি সেলাই দিয়ে তার স্বামীকেও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 

অভিযোগে তিনি আরও বলেন, ‘ঘটনার পর থেকেই বমি করতে থাকে জীবন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নাটোর সদর হাসপাতাল ও পরে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। দীর্ঘ সময় পার হলেও অজ্ঞান অবস্থায় তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে।’ তিনি ওই ঘটনায় তদন্ত শেষে ওই চেয়ারম্যান এবং তার ভাইদের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি করেছেন।

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত চেয়ারম্যানের ছোট ভাই মনজু দাবি করেন, মসজিদের একটি মাইক চুরির বিষয়ে কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের সময় মাদকের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে ৭১  জনের নাম আসে। এতে জীবনের নামও ছিল। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জীবন ফেসবুক এসে চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে নানা অপমান ও আপত্তিকর কথা।’

এ ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় আমতলী বাজারে এসে চেয়ারম্যানের সঙ্গে জীবনের সঙ্গে কথা বলেন চেয়ারম্যান। মনজু বলেন, ‘এ সময় জীবনকে ওই স্ট্যাটাসের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। কথাবার্তার একপর্যায়ে উত্তেজিত হয়ে জীবন উপজেলা চেয়ারম্যানকে একটা ঘুষি মারেন। তখন রাগ সংবরণ করতে না পেরে আসাদ তাকে দু-তিনটি থাপ্পড় মারেন। ওই চড় থাপ্পড় খেয়ে দৌড়ে পালানোর সময় রাস্তার উপর পড়ে যায় জীবন।’

এর বাইরে তাকে আর কোনোরকম মারপিট করা হয়নি দাবি করে তিনি আরও বলেন, ওই সময় জীবনকে বাঁচাতে ওর বাবা দৌড়ে আসলে একজনের হাতে থাকা একটি লাঠির আঘাত ওর বাবার মাথায় পড়লে তিনি আহত হন।

নলডাঙ্গা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, এজাহারের আলোকে মামলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।