ইউএনও সমর কুমারের সঙ্গে কাজ করতে চান না ১৪ জনপ্রতিনিধি

বগুড়া সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সমর কুমার পালের বিরুদ্ধে ফাইল আটকে ঘুষ গ্রহণ ও স্বেচ্ছাচারিতাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ এনে তাকে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন উপজেলা পরিষদ ও ১১ ইউনিয়নের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা। তার বিরুদ্ধে কর্মচারীদের মারধর করার অভিযোগও এনেছেন তারা। এসব বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারকে চিঠি দিয়েছেন তারা।

বিভাগীয় কমিশনারের কাছে দেওয়া চিঠিতে বগুড়া সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, দুই ভাইস চেয়ারম্যান ও ১১ ইউপি চেয়ারম্যান স্বাক্ষর করেন। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, সমর কুমার পাল সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর থেকে পরিষদ ও সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে স্বেচ্ছাচারিতামূলক আচরণ করে আসছেন। চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান, কর্মকর্তা ও কর্মচারীসহ কাউকে তোয়াক্কা করেন না। সবার সঙ্গেই স্বেচ্ছাচারিতামূলক আচরণ করেন। তিনি সময়মতো অফিসে বসেন না এবং সরকারি সিদ্ধান্ত অমান্য করে গভীর রাত পর্যন্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অফিসে থাকতে বাধ্য করেন। যখন তখন চেয়ারম্যানদের বিনা প্রয়োজনে তার কার্যালয়ে ডাকেন। অফিসিয়াল ফাইল দিনের পর দিন আটকে রেখে অনৈতিক সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করেন।

এসব আচরণ নিয়ে উপজেলা পরিষদ ও ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানরা তার (ইউএনও) সঙ্গে আলোচনা করেছেন। আচরণ পরিবর্তন করার পরামর্শ দিলেও তা মানা হয়নি। তিনি উপজেলা চেয়ারম্যানসহ সবার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ অব্যাহত রাখেন। ইউএনও গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যার পর উপজেলা প্রকৌশলী কার্যালয়ের নৈশপ্রহরী আলমগীর শেখকে তার অফিসে ডেকে মারধর করেন। এ ছাড়া তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে উপজেলা চেয়ারম্যানকে নিয়ে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দেন।

এতে উপজেলা পরিষদের মর্যাদা ও শৃঙ্খলা ক্ষুণ্ন হয়েছে। তাই উপজেলা পরিষদ এই স্বেচ্ছাচারী, বদমেজাজি ও পরিষদের শৃঙ্খলা নষ্টকারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার সঙ্গে কার্যক্রম পরিচালনা করতে চায় না। পরিষদের সবাই সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সমর কুমার পালের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো আমলে নিয়ে তাকে অন্যত্র বদলির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিভাগীয় কমিশনারকে অনুরোধ করেছেন।

এই বিষয়ে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু সুফিয়ান সফিক দাবি করেন, ‘দুর্নীতিবাজ ইউএনওকে প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তার কোনও সভায় পরিষদের সদস্যরা অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।’

অভিযোগ প্রসঙ্গে ইউএনও দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন, ফাইলে সমস্যা থাকলে তা পরীক্ষার জন্য আটকে রাখা স্বাভাবিক। তিনি কোনও কর্মচারীকে মারধর করেননি। তারা কী কারণে তাকে বর্জন করছেন তা বোধগম্য নয়।

বগুড়া জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক বলেন, ‘একটি চিঠি এসেছে। বিষয়টি শুনেছি। চিঠিটি বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পাঠানো হবে। সেখান থেকে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে, গত বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে উপজেলা প্রকৌশল অফিসের নৈশপ্রহরী আলমগীর শেখকে মারধর করার বিষয়টি বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসক জিয়াউল হক অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সালাহউদ্দিন আহমেদকে তদন্তের দায়িত্ব দেন।

সোমবার বিকালে সালাহউদ্দিন জানান, তিনি তদন্ত শুরু করেছেন। নৈশপ্রহরী আলমগীর শেখ সাক্ষ্য দিয়েছেন।
তবে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি এই বিষয়ে মন্তব্য করবেন না।