‘রাবি শিক্ষার্থীর লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের দাবি’

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী কে জি এম শাহরিয়ারের লাশ কবর থেকে তুলে ময়নাতদন্তের দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা। ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভাঙচুর ও ইন্টার্ন চিকিৎসদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ডাকা মানববন্ধনে অংশ নিয়ে এ দাবি জানান তিনি। ফজলে হোসেন বাদশা হাসপাতাল পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি।

শনিবার (২২ অক্টোবর) দুপুরে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের মূল ফটকের সামনে এ মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সমাবেশে উপস্থিত হয়ে রাবির শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে সংসদ সদস্য বলেন, ‌‘ময়নাতদন্ত না করে লাশ নিয়ে পালিয়ে গেলেন কেন? তাহলে তো আমরা বলতে পারি, ওই শিক্ষার্থীকে হত্যা করে আপনারা লাশ নিয়ে এসেছিলেন। পরিবারকে হুমকি দিয়ে আপনারা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে গেছেন। আমরা হাসপাতালের পক্ষ থেকে মামলা করেছি। আমরা চাই, কবর থেকে লাশ তুলে ময়নাতদন্ত করা হোক। সেইসঙ্গে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি জানাই।’

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আগামী ২৬ অক্টোবর হাসপাতালের পরিচালনা পর্ষদ বসবে। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে দাবি করছি, এর একটা সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশেষ কমিটি গঠন করে গোয়েন্দা বিভাগকে দায়িত্ব দেওয়া হোক। দুষ্কৃতকারীদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনা হোক।’

ফজলে হোসেন বাদশা আরও বলেন, ‘গভীর রাতে প্রতিকূল মুহূর্তে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা চিকিৎসা দেন। তাদের স্বাস্থ্যসেবার উদাহরণ করোনাকালীন আমরা দেখেছি। তাদের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সরকারের পদক পেয়েছে। অথচ এখন হাসপাতালের ইন্টার্নদের ঘাড়ে একটি মিথ্যা অপবাদ চাপিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে।’

বাদশা বলেন, ‘খবরে দেখেছি, মগজ হবিবুর রহমান হলে আর আহত শিক্ষার্থী হাসপাতালে। যার মগজ পড়ে আছে হলে তার পালস কীভাবে ইমার্জেন্সিতে পাওয়া যেতে পারে? এটা কি হতে পারে? আমি যদি বলি, যারা হত্যাকারী তারাই হাসপাতালে লাশ নিয়ে এসে নাশকতা চালিয়েছে। ইন্টার্ন, নারী চিকিৎসক ও নার্সদের ওপর হামলা করেছে। রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত করেছে। এতে প্রমাণিত হয়, শাহরিয়ারকে মৃত অবস্থায় আনা হয়েছিল। এজন্য তার পালস পাওয়া যায়নি।’

পুলিশের উদ্দেশ্যে বাদশা বলেন, ‘সেই রাতে যারা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এসেছিল তাদের সবার ভিডিও ফুটেজ বহু জায়গায় আছে। তাদেরকে চিহ্নিত করা হোক, তারা কে? কি তাদের পরিচয়? তারা কি উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছিল? কেন ইন্টার্নদের ওপর হামলা চালিয়েছে? তা খতিয়ে দেখা দরকার।’

মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী, বিএমএ রাজশাহী শাখার সভাপতি ও রামেকের অধ্যক্ষ ডা. নওশাদ আলী, স্বাচিপ রাজশাহী শাখা সভাপতি ডা. খলিলুর রহমান ও রামেক ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইমরান হোসেন।

এর আগে সকাল থেকে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের ওপর হামলা ও ভাঙচুরে জড়িতদের শাস্তিসহ তিন দফা দাবিতে আবারও ধর্মঘট শুরু করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। সকাল ১০টা থেকে কয়েক দফায় আলোচনার পর দুপুরে এমপি ফজলে হোসেন বাদশাকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে ৭২ ঘণ্টার ধর্মঘটের ডাক দেন ইন্টার্নরা। মানববন্ধন শেষে কোনও ইন্টার্ন চিকিৎসক কাজে যোগ দেননি।

ইন্টার্ন চিকিৎসকদের দাবিগুলো হলো- হলে রাবি ছাত্র শাহরিয়ারের মৃত্যুর কারণ খুঁজে বের করা, হাসপাতালে চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, হামলা ও ভাঙচুরে জড়িতদের গ্রেফতার করে শাস্তির আওতায় আনা। 

মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে ধর্মঘটের ডাক দিয়ে বক্তব্য রাখেন ইন্টার্ন চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি ডা. ইমরান  হোসেন। কর্মবিরতি চলাকালে প্রতিদিন হাসপাতালের সামনে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

গত বুধবার রাত ৮টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হবিবুর রহমান হলের তিনতলা থেকে পড়ে শাহরিয়ার নামে এক শিক্ষার্থী আহত হন। অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে রামেকে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয়। 

এরপর চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগ তুলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের ওয়ার্ড ও পরিচালকের কক্ষের সামনে ভাঙচুর চালান। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হন।