রাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিচার দাবি, এমপি বাদশাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা

রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ‘চিকিৎসা অবহেলায়’ শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় বিচার দাবি করে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসকদের পক্ষে শিক্ষার্থীদের নিয়ে ‘একপাক্ষিক’ কথা বলায় রাজশাহী সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছে। তার কুশপুত্তলিকা দাহ করেন তারা। কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্রলীগ একাত্মতা ঘোষণা করেছে।

রবিবার (২৩ অক্টোবর) বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। এ সময় ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন শিক্ষার্থীরা।

তাদের দাবিগুলো হলো—শাহরিয়ারের চিকিৎসায় অবহেলা এবং লাশের পাশে অবস্থানকালে সহপাঠীদের ওপর হামলা, হত্যাচেষ্টা ও শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িত ইন্টার্ন চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয় ও আনসারদের অবিলম্বে দায়িত্ব থেকে অপসারণ ও তদন্তের মাধ্যমে প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনা; এ ঘটনার প্রত্যক্ষ মদতদাতা হাসপাতালের পরিচালক শামীম ইয়াজদানীকে অপসারণ করা; হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা ও জরুরি মুহূর্তে ফর্মালিটিজের নামে হয়রানি, চাঁদাবাজি ও ক্লিনিকের সঙ্গে যোগসাজশ বন্ধ করা; হাসপাতালে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সিন্ডিকেট ভাঙা এবং চিকিৎসকের দোষ ওয়ার্ডবয়ের ওপর আর ওয়ার্ডবয়ের দোষ চিকিৎসকের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার সংস্কৃতি ভাঙতে হবে।

অন্য দাবির মধ্যে আছে—সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য প্রত্যাহার করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের স্বেচ্ছাচারিতা, রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ পরিহার করতে হবে, জরুরি বিভাগে নার্স ও ওয়ার্ডবয় দিয়ে প্রক্সি দেওয়া বন্ধ করে জ্যেষ্ঠ চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করা, আইসিইউ ব্যবস্থা সহজ করা এবং অনতিবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জাতির কাছে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরতে হবে।

কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. ফরিদুল ইসলাম, অধ্যাপক মো. সেলিম রেজা, অধ্যাপক শুভ্রা রানী চন্দ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আসাবুল হক, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া, সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদসহ মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচিতে মার্কেটিং বিভাগসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের কয়েকশ শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

মার্কেটিং বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. ফরিদুল ইসলাম বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ৯ দফার সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছি আমরা। কোনও প্রতিষ্ঠানের প্রধান, নির্বাচিত প্রতিনিধি যখন একটি বিষয় সুরাহার দিকে যায়, সে বিষয় নিয়ে অবিবেচকের মতো পথচলা শুরু করেন, তখন শিক্ষার্থীদের সামনে কোনও পথ থাকে না। শিক্ষার্থীরা সেদিন বিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কিনা, সেটা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সবাই জানে। সেদিন শুধু আমাদের শিক্ষার্থী চিকিৎসা অবহেলায় মারা যায়নি। গণমাধ্যমে দেখা গেছে, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে তার সন্তানের লাশের সামনে কীভাবে পেটানো হয়েছিল। সাংবাদিকরা ছয় বছর ধরে হাসপাতালে ঢুকতে পারেন না। সেখানে সিন্ডিকেট করে রাখা হয়েছে। এসব ভাঙতে হবে।’

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে প্রক্টর আসাবুল হক বলেন, ‘শাহরিয়ারকে আইসিইউতে নিতে আমি বারবার ইন্টার্ন চিকিৎসককে অনুরোধ করি। কিন্তু কাজ হয়নি। পরে ব্রিগেডিয়ারকে বলি। তখন তার কথা শুনে মনে হলো এ শহরের সবাই তার কাছে অসহায়। তিনি আমাকে বোঝান, “কীভাবে আইসিইউ পেতে হয় সেটা আপনার জানা উচিত, আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জানা উচিত।” আমি তখন বলি, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২৮ বছর ধরে চাকরি করি, আমি জানি না, আমাকে জানান। তখন তিনি বলেন, “প্রধানমন্ত্রী আবেদন করলেও তাকে ওয়েট করতে হবে।”

রাবি ছাত্রলীগের সভাপতি গোলাম কিবরিয়া বলেন, ‘সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশাকে আমরা সম্মান করি। বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক শিক্ষার্থী হিসেবে উনি এভাবে বক্তব্য দিতে পারেন না। উনি যে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, সেই বক্তব্যে একটি পক্ষ উসকানি পাচ্ছেন এবং এ ঘটনাকে জিইয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। তার ওই বক্তব্য প্রত্যাহার না করা পর্যন্ত তাকে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করছি আমরা।’

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রের মৃত্যু রহস্য ধামাচাপা দিতে হাসপাতালে হামলা করা হয়েছে বলে মন্তব্য করে লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করেছেন হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের সভাপতি ও রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। রবিবার (২৩ অক্টোবর) বিকালে রাজশাহীর হড়গ্রামে তার রাজনৈতিক কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করে এ দাবি জানান তিনি।

ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ‘আগামী ২৬ অক্টোবর হাসপাতাল পরিচালনা পরিষদের জরুরি সভা ডাকা হয়েছে। ওই সভার পর আমরা স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাবো, যে উচ্চ পর্যায়ের একটি টিম এসে এ ঘটনার তদন্ত করুক। লাশ উত্তোলন করে ময়নাতদন্ত করতে হবে। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রের ঘাতক কে, হাসপাতালে হামলা কারা করেছে; তাদের চিহ্নিত করতে হবে।’

গত বুধবার রাত ৮টার দিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) হবিবুর রহমান হলের তিনতলা থেকে পড়ে শাহরিয়ার নামে এক শিক্ষার্থী আহত হন। অন্য শিক্ষার্থীরা তাকে উদ্ধার করে রামেকে নিয়ে গেলে মৃত্যু হয়। এরপর চিকিৎসা না দেওয়ার অভিযোগ তুলে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের ওয়ার্ড ও পরিচালকের কক্ষের সামনে ভাঙচুর চালান। এ সময় ইন্টার্ন চিকিৎসক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে কয়েকজন আহত হন।