রাস্তার ধুলায় অতিষ্ঠ ২০ গ্রামের মানুষ

নির্ধারিত সময়ের পর দুই দফায় বাড়ানো মেয়াদ শেষ হলেও নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল-রাজাপুর রাস্তা সংস্কার কাজ শেষ হয়নি। কাজের এ কচ্ছপগতির কারণে রাস্তার ধুলায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছেন তিনটি ইউনিয়নের ১৫-২০টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা। রাস্তাটিতে যানবাহন চলাচল করলে ধুলায় আশপাশের বসতবাড়ি ও দোকানপাটে মানুষের থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। ধুলার আস্তরণ পড়েছে আশপাশের বাড়ির চালে, গাছের পাতায়। এ যেন এক ধুলার রাজ্য।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ১০-১২ দিনের মধ্যেই শুরু হবে রাস্তার কাজ।

এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২৯ অক্টোবর নাটোরের বড়াইগ্রাম উপজেলার জোনাইল পাগলা বাজার থেকে রাজাপুর বাজার পর্যন্ত প্রায় ১৮ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও বর্ধিতকরণ কাজের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য আব্দুল কুদ্দুস। ঢাকার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শহীদ ব্রাদার্স ২০ কোটি ৫২ লাখ টাকা চুক্তিমূল্যে কাজটি পায়। প্রতিনিধি হিসেবে ওই কাজ পান নাটোরের ঠিকাদার শরিফুল ইসলাম রমজান।  চুক্তি অনুযায়ী গত বছরের ১২ এপ্রিল ওই সংস্কার কাজের মেয়াদ শেষ হয়। এর পর দুই দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় বাড়ানো মেয়াদও শেষ হয় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি । কিন্তু ওই সংস্কার কাজ শেষ হয়নি এখনও। দীর্ঘদিন ওই অবস্থা থাকায় বেকায়দায় পড়েছেন রাস্তার পাশে বসবাসকারী ও পথচারীরা।  

গাছের পাতায় জমেছে ধুলা

সরেজমিনে দেখা যায়, ওই রাস্তার পুরনো কার্পেটিং উঠিয়ে নতুন করে ইটের খোয়া বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এরপর কার্পেটিং না করায় যান চলাচলে রাস্তার খোয়া ভেঙে গুঁড়ো হয়ে গেছে। যান চলাচলে ও সামান্য বাতাসে সারাদিন ইটের গুঁড়াসহ ধুলা উড়ছে। রাস্তার আশপাশের বাড়িঘরের চালে, গাছের পাতায় ধুলায় আস্তরণ পড়েছে। ধুলায় যাতায়াতকারী ও এলাকাবাসীদের হচ্ছে এলার্জি, হাঁচি, কাশি, এ্যাজমাসহ নানা রোগ। রাস্তার পাশের দোকানিরা ধুলা থেকে রক্ষা পেতে প্রতিদিন দুই-তিনবার পানি ছিটাচ্ছেন রাস্তায়।

দোকানিদের দাবি, দোকানে বসে কেউ কিছু খেতে পারেন না। চা-বিস্কুরসহ বিভিন্ন খাবারে উড়ে আসে ধুলা।

দিঘইর গ্রামের অধিবাসী পরশ বলেন, ‘ধুলায় বাড়ির জানালা বন্ধ করে রাখতে হয়। জানালা একটু খোলা রাখলেই ধুলার আস্তরণ পড়ে আসবাবে। খাবারেও পড়ে ধুলা। ভাত খেতে গেলে কিচকিচ করে। বাইরে বের হলে ফিরেই গোসল করতে হয়। জামাকাপড় ধুলায় নষ্ট হচ্ছে।’

ওই রাস্তা সংলগ্ন এলাকায় চারটি উচ্চ বিদ্যালয়, ২০টি কিন্ডার গার্টেন, তিনটি মাদ্রাসা আর ১০-১৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের ধুলার জন্য প্রতিদিন পড়তে হচ্ছে ভোগান্তিতে। 

রাস্তার পাশে রাখা বাইকে জমেছে ধুলা

সেন্ট লুইস উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমাইয়া আক্তার জানায়, প্রতিদিন হেঁটে ওই রাস্তা দিয়ে স্কুলে যাতায়াত করতে হয়। একদিনেই স্কুলড্রেস ময়লা হয়ে যায়। 

দিঘইর সয়াবাড়িয়া গ্রামের অধিবাসী আমজাদ হোসেন জানান, নাটোর-পাবনা মহাসড়কের রাজাপুর এলাকায় সংযুক্ত হয়েছে ওই রাস্তার একাংশ। অপর অংশ যুক্ত হয়েছে নাটোর-সিরাজগঞ্জ তথা বনপাড়া-হাটীকুমড়ুল মহাসড়কে। ফলে প্রতিদিনই ওই রাস্তা ব্যবহার করেন হাজার হাজার মানুষ। 

স্থানীয়দের ভোগান্তি কমাতে রাস্তাটির দ্রুত কাজ শেষ করতে আহ্বান জানান তিনি। 

এ ব্যাপারে নাটোর এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী শহিদুল ইসলাম জানান, ‘পাশের লালপুরে কাজ করছেন ওই ঠিকাদার। আগামী ১০ -১২ দিনের মধ্যে ওই রাস্তার কাজ শুরু করা হবে।’