যেভাবে ঈদ উদযাপন করেন ঐতিহ্যবাহী শাহ মখদুম ঈদগাহের ইমাম

মাসব্যাপী সিয়াম-সাধনার পর মুসলিমদের কাছে এসেছে ঈদুল ফিতর। ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবের মধ্য দিয়ে দিনটি উদযাপন করছেন মুসলমানরা। রাজশাহীতে সর্ববৃহৎ ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী হজরত শাহ মখদুম (রহ.) ঈদগাহে। শনিবার (২২ এপ্রিল) সকাল ৮টায় এখানে ঈদ জামাতে ইমামতি করেছেন জামিয়া ইসলামিয়া শাহ মখদুম (রহ.) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ শাহাদাত আলী। তিনি কীভাবে ঈদ উদযাপন করেন তা নিয়ে আমাদের আজকের আয়োজন।

দিনটির ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য, রীতিনীতি ও উৎসব সম্পর্কে মুফতি শাহাদাত আলী বলেন, ‘ঈদের দিন প্রত্যেক মুসলমানের জন্য আনন্দের। কারণ একজন মুসলমান পবিত্র একটি মাসজুড়ে সিয়াম-সাধনার মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করেন। এরপর নিষ্পাপ শিশুর মতো গুনাহ মাফের পয়গাম নিয়ে ঈদগাহে হাজির হন।’

দিনটি অন্যান্য দিনের মতো নয় উল্লেখ করে শাহাদাত আলী বলেন, ‘ঈদুল ফিতরের দিনটিতে বিশেষ কিছু ধর্মীয় রীতিনীতি পালন করি। ঈদগাহে যাওয়ার আগের রাত থেকে প্রস্তুতি নিই। অন্যান্য দিন ঘুম থেকে উঠে নামাজ আদায় করে কোরআন তিলাওয়াত করি। এরপর সূর্যোদয়ের কিছুক্ষণ পর নামাজ পড়ি। কিন্তু ঈদের দিন ফজরের নামাজ আদায় করে ঈদগাহে যাওয়ার প্রস্তুতি নিই। প্রথমে গোসল করি। গোসল শেষে নতুন পোশাক পরি। সুন্নত অনুযায়ী সুগন্ধি ও সুরমা ব্যবহার করি। হালকা নাশতা করি। এরপর পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সালাম বিনিময় করে ঈদগাহে রওনা হই। তবে ঈদগাহে যাওয়ার আগে অবশ্যই ফিতরা দেওয়ার কাজ শেষ করি।’

ঈদ জামাতে ইমামতি করছেন মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ শাহাদাত আলী

৩৩ বছর ধরে জামিয়া ইসলামিয়া শাহ মখদুম (রহ.) মাদ্রাসার অধ্যক্ষ হিসেবে আছি জানিয়ে মুফতি মোহাম্মদ শাহাদাত আলী বলেন, ‘২০ বছর ধরে হজরত শাহ মখদুম (রহ.) ঈদগাহের ইমামের দায়িত্ব পালন করছি। এই ঈদগাহে প্রতি বছর ২০ হাজারের বেশি মানুষ নামাজ আদায় করেন। ঈদুল আজহার চেয়ে ঈদুল ফিতরে মুসল্লি বেশি হয়। ঈদগাহের রক্ষণাবেক্ষণসহ যাবতীয় দেখভাল করে সিটি করপোরেশন। ঈদ জামাতে আমাকে সহযোগিতা করেন সহকারী ইমাম হেতেম খাঁ বড় মসজিদের ইমাম মুফতি ইয়াকুব আলী এবং দরগা শরিফ মসজিদের ইমাম মাওলানা মুহিবুল্লাহ।’

তিনি বলেন, ‘এবার সকাল ৮টায় ঈদের জামাত হয়েছে। এখানে দ্বিতীয় কোনও জামাত হয়নি। ১০-১২ মিনিটের মধ্যে নামাজ শেষ হয়েছে। প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ রাসিক মেয়র জামাতে উপস্থিত ছিলেন। জামাতের আগে কিছু বয়ান হয়েছে। মূলত নামাজের নিয়মকানুন নিয়ে আলোচনা। নামাজ শেষে খুতবা। এরপর মুসল্লিদের সঙ্গে কোলাকুলি ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেছি। শুভেচ্ছা বিনিময়ে ঘণ্টাখানেক পার হয়েছে। এরপর যে রাস্তা দিয়ে ঈদগাহে গেছি, অন্য রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরেছি। কারণ এটি রাসুলের (সা.) সুন্নত। বাড়ি ফিরে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছি। নাতি-নানতিসহ পরিবারের সবাইকে সালামি দিয়েছি। পরে ছেলেমেয়ে ও নাতি-নাতনির সঙ্গে খুনসুটি করেছি।’ 

ঈদ জামাত শেষে মোনাজাত করছেন মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ শাহাদাত আলী

ঈদের দিনে অতিথি আপ্যায়নে কিছু রীতি মেনে চলি উল্লেখ করে মুফতি মোহাম্মদ শাহাদাত আলী বলেন, ‘সেমাই রান্না করে প্রতিবেশীদের আপ্যায়ন, কিছু ফল অথবা একটু লেবুর শরবত পরিবেশন করি। এসব করতে করতে দুপুর হয়ে যায়। দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষে বিশ্রাম নিই। বিকালে বন্ধুবান্ধব ও প্রতিবেশীদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করি। মূলত ঈদের দিনটি এভাবেই কেটে যায় আমার।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি এই ঈদগাহে দীর্ঘদিন ধরে ইমামতি করছি। ২০ বছর আগে এবং বর্তমান ঈদ উৎসবের মধ্যে কিছু পার্থক্য লক্ষ করছি। ২০ বছর আগে মানুষ এত উচ্ছৃঙ্খল ছিল না। সুন্দর ও সাবলীলভাবে ঈদ উদযাপন করতো। এখন নতুন প্রজন্মের অনেকে রোজা রেখেছে কী রাখেনি, ঈদগাহে গেলো কী গেলো না, এর চেয়ে উচ্ছৃঙ্খলতাকে উৎসব মনে করে। ঈদের দিন গাড়ি ভাড়া করে উচ্চস্বরে গান বাজায়, ফটকা ফুটায়, ভেঁপু বাঁশি বাজিয়ে উৎসব করে। তাদের উচ্ছৃঙ্খলতা ও শব্দদূষণ নারী-শিশু এবং বৃদ্ধসহ অসুস্থদের ঈদের আনন্দ মলিন করে দেয়। অনেক যুবক গ্রুপিং করে দ্রুতগতিতে বাইক চালায়। এতে অন্যরা রাস্তায় হাঁটতে পারে না। বিষয়গুলো পরিহার করা উচিত। পরিবার থেকেও এগুলো শেখানো উচিত।’