গাড়ি বিকল হয়ে বিপদে পড়া খালা-ভাগনিকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, গ্রেফতার ৫

বগুড়ার কাহালুতে এক গার্মেন্টকর্মী (৩৯) ও তার কিশোরী ভাগনিকে (১৫) রাস্তা থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও ডাকাতির ঘটনায় মামলা করা হয়েছে। বুধবার (১৯ জুলাই) কাহালু থানায় ১০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। পুলিশ রাতভর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচ আসামিকে গ্রেফতার করেছে। তাদের কাছ থেকে লুণ্ঠিত এক জোড়া সোনার কানের দুল ও ১৫ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।

গ্রেফতার আসামিরা হলো- কাহালুর কুশলীহার পূর্বপাড়ার আশরাফ আলী ফকিরের ছেলে আবুল কাশেম মানিক (৩৫), একই গ্রামের মোস্তফা ফকিরের ছেলে হাবিবুর রহমান হাবিব (২৫), একই উপজেলার বাগাইল দক্ষিণপাড়ার আবু বক্কর সিদ্দিকের ছেলে রাকিব হাসান (২৩), বাগইল উত্তরপাড়ার নুরুল ইসলামের ছেলে
শাকিল হোসেন (২৩) ও একই এলাকার আইয়ুব আলীর ছেলে আতিক রহমান প্রান্ত (২২)।

ভুক্তভোগী গার্মেন্টকর্মী এজাহারে উল্লেখ করেন, তিনি নারায়ণগঞ্জের একটি পোশাক কারখানায় ক্লিনারের কাজ করেন। গত ১২ জুলাই দুপুর ১২টার দিকে বাসে বড় বোনের মেয়ে ও এক সহকর্মীকে (৩৫) নিয়ে রংপুরের উদ্দেশে রওনা দেন। বাসটি রাতে বগুড়া সদরের বারপুর এলাকায় মহাসড়কে পৌঁছালে বিকল হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে রাত ২টার দিকে তারা সহকর্মীর বন্ধু কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের কুশলিহার পূর্বপাড়া গ্রামের ভ্যানচালক আবদুর রাজ্জাকের বাড়িতে রাত্রী যাপনের জন্য আশ্রয় নেন। পরদিন সকালে প্রধান আসামি আবুল কাশেম মানিক ও অন্যরা গ্রামের প্রচার করে রাজ্জাক বাড়িতে ‘খারাপ মেয়ে’ এনে অসামাজিক কাজ করছে। ফলে তারা দিনভর বাড়ি থেকে বের হতে পারেননি।

সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটে তারা আবদুর রাজ্জাকের ভ্যানে রংপুরগামী বাস ধরার জন্য রওনা দেন। পথিমধ্যে রাত সোয়া ৮টার দিকে বাগাইল গ্রামের বড়পুকুর ব্রিজের কাছে পৌঁছান। এ সময় আসামি আবুল কাশেম মানিকের নেতৃত্বে ৮/১০ জনের একদল ডাকাত ভ্যানের পথরোধ করে। তারা চালকসহ চার জনকে ভ্যান থেকে নামিয়ে চাকুর মুখে জিম্মি করে। এরপর ভয় দেখিয়ে সঙ্গে থাকা ৭২ হাজার টাকা, এক জোড়া সোনার কানের দুল ও একটি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয়। রব্বানী ও রাজ্জাককে মারধর করে আটকে রেখে খালা ও তার কিশোরী ভাগনিকে অপহরণ করে।

গার্মেন্টকর্মীকে কাহালু উপজেলার বাগইল পশ্চিমপাড়া গ্রামের একটি পুকুর পাড়ে নিয়ে সব আসামি সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এ ছাড়া মানিকসহ দুজন কিশোরীকে মহিষামুড়া-বাগইল সড়কের উত্তর পাশে তালগাছের নিচে নিয়ে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করে। এতে ওই কিশোরী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ঘটনা প্রকাশ করলে রব্বানী ও রাজ্জাককে হত্যার হুমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেয়। আর দুই ভুক্তভোগীকে ভ্যানে তুলে বগুড়া শহরের সাতমাথায় এনে নারায়ণগঞ্জগামী বাসে তুলে দেয়। তারা ঢাকায় ফিরে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হন। আইনি ব্যবস্থা নিতে ওই গার্মেন্টকর্মী বুধবার স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে কাহালুর কুশলিহার পূর্বপাড়ায় ভ্যান চালক রাজ্জাকের বাড়িতে আসেন। পরে তাকে সঙ্গে নিয়ে কাহালু থানায় গিয়ে মামলা করেন।

এদিকে মামলা দায়েরের পর কাহালু থানার ওসি মাহমুদ হাসান ও ইন্সপেক্টর (তদন্ত) এ বি এম ফিরোজ ওয়াহিদের নেতৃত্বে বুধবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে মূলহোতা মানিকসহ পাঁচ জনকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা ধর্ষণ ও ডাকাতির কথা স্বীকার করে। তাদের কাছ থেকে ডাকাতির ১৫ হাজার টাকা ও এক জোড়া সোনার কানের দুল উদ্ধার করা হয়েছে। তবে মোবাইল ফোনটি পাওয়া যায়নি।

জেলা পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী আজ দুপুরে নিজ কার্যালয়ে প্রেস বিফ্রিংয়ে জানান, আসামিদের আদালতে হাজির করে সাত দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।