পাওনা ১০ হাজার টাকা ফেরত চাওয়ায় গৃহবধূকে হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে হত্যা

বগুড়া শহরের নিশিন্দারা মধ্যপাড়ায় গৃহবধূ তাসলিমা আকতার (২৩) হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় শাকিব উদ্দিন (২৪) নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার সন্ধ্যায় বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিনিয়া জাহানের আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন শাকিব। 

এর আগে দুপুরে পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্তী নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন। নিহত তাসলিমা আকতার নিশিন্দারা মধ্যপাড়ার ভাঙারি ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলামের স্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার বলেন, ‘পাওনা ১০ হাজার টাকা ফেরত চাওয়ায় হাতুড়ি দিয়ে উপর্যুপরি পিটিয়ে গৃহবধূ তাসলিমাকে হত্যা করেন অটোরিকশাচালক শাকিব উদ্দিন। তিনি বগুড়া সদরের রাজাপুর গ্রামের আনিসার রহমানের ছেলে। হত্যাকাণ্ডের শিকার তাসলিমার বাবার বাড়ির প্রতিবেশী ও পূর্বপরিচিত ছিলেন। হত্যার পর শাকিবকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বগুড়া সদর থানায় করা হত্যা মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে শাকিব হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেছেন।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ‘১৯ অক্টোবর দুপুরে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়ে বগুড়া শহরে বের হয়েছিলেন শাকিব উদ্দিন। শহরের নিশিন্দারা এলাকায় অন্য একটি অটোরিকশার সঙ্গে ধাক্কা লেগে শাকিবের অটোরিকশাটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশেই তাসলিমার বাসা থেকে হাতুড়ি সংগ্রহ করে অটোরিকশা মেরামত করেন শাকিব। হাতুড়ি ফেরত দিতে আবার তাসলিমার বাসায় যান। তাসলিমার বাবার বাড়ির প্রতিবেশী ও পূর্বপরিচিত হওয়ায় তাসলিমা বিস্কুট-চানাচুর খেতে দিয়ে শাকিবকে আপ্যায়নও করেন। একপর্যায়ে শাকিবকে ধার দেওয়া ১০ হাজার টাকা ফেরত চান তাসলিমা। এ নিয়ে দুই জনের বাগবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে শাকিব ক্ষুব্ধ হয়ে তাসলিমার মাথায় হাতুড়ি দিয়ে আঘাতের চেষ্টা করেন শাকিব। লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে হাতুড়ির আঘাত তাসলিমার শিশুসন্তানের মাথায় লাগে। পরে আবার হাতুড়ি দিয়ে তাসলিমার মাথায় উপর্যুপরি আঘাত করেন শাকিব। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান। পরে তাসলিমার তিন বছরের শিশুসন্তানের হাত-পা বেঁধে অন্য কক্ষে আটকে রাখেন। বাসা থেকে বের হওয়ার সময় মোবাইল ও ল্যাপটপ নিয়ে যান। ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে বগুড়া শহরের নিশিন্দারা মধ্যপাড়া এলাকায় বাসা থেকে তাসলিমার রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। বিকালে দাফন করা হয়। এ ঘটনায় তাসলিমার বাবা বগুড়া সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।’

নিহত তাসলিমার স্বামী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার সকালে ব্যবসার কাজে বাসা থেকে বের হই। রাত ৮টার দিকে বাসায় আসি। এ সময় বাসার ডাইনিংরুম অন্ধকার ছিল। স্ত্রী-সন্তানের সাড়াশব্দ না পেয়ে বৈদ্যুতিক লাইট জ্বালিয়ে দেখি, মেঝেতে তাসলিমার রক্তাক্ত দেহ পড়ে আছে। পাশেই পড়েছিল রক্তমাখা হাতুড়ি। এর পাশেই শিশুসন্তান কাজিম উদ্দিনের মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থায় দেখতে পাই। পরে শিশুটিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।’

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সদর থানার এসআই জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘শাকিব উদ্দিনকে শনিবার বিকালে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জিনিয়া জাহানের আদালতে হাজির করা হয়। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। পরে তাকে বগুড়া কারাগারে পাঠানো হয়। ঘটনার পর শাকিবকে বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তার কাছ থেকে ল্যাপটপ, তাসলিমার মোবাইল এবং রক্তামাখা হাতুড়ি উদ্ধার করা হয়েছে।’