কালাইয়ে ছেলের হাতে বাবা খুন

জয়পুরহাটের কালাইয়ে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জেরে ছেলের কুড়ালের আঘাতে বাবা আব্দুল আলিম (৪২) প্রাণ হারিয়েছেন। নিহত ব্যক্তি উপজেলার উদয়পুর ইউনিয়নের আনিপুকুর গ্রামের মৃত আবু বক্করের ছেলে। বুধবার (২২ নভেম্বর) সকালে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

পুলিশ ও স্থানীয়রা বলেন, আব্দুল আলিমের প্রথম স্ত্রী ও একমাত্র ছেলে রেজভি আহমেদকে (২১) রেখে আরেকজনের সঙ্গে পালিয়ে বিয়ে করেন। এরপর এলাকায় আরেক মেয়েকে বিয়ে। তখন থেকে ছেলে রেজভি তার নানার বাড়ি একই জেলার পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা ইউনিয়নের শেকটা গ্রামে বসবাস করেন। তার বর্তমান বয়স ১৯। সে বাবার কাছে  জমির ভাগ নিতে প্রায় বাড়িতে আসেন। এরই জেরে সোমবার (২০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে বাবার বাড়িতে আসেন রেজভি।

রাত দেড়টার দিকে রেজভি ও তার স্ত্রী মিলে ঘরের মধ্যে কুড়াল দিয়ে প্রথমে বাবাকে আঘাত করেন। এ সময় আব্দুল আলিমের বর্তমান স্ত্রী স্বামীকে বাঁচাতে এলে তাকেও আঘাত করেন। একপর্যায়ে রাতেই রেজভি তার স্ত্রীকে নিয়ে পালিয়ে যান। এরপর প্রতিবেশীরা আহতদের উদ্ধার করে প্রথমে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। তাদের অবস্থার অবনতি হলে রাতেই চিকিৎসকরা দুজনকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আব্দুল আলিম আজ সকাল সাড়ে ৯টায় মারা যান। তার স্ত্রী তাছলিমা বেগম গুরুতর আহত অবস্থায় একই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।

নিহতের চাচাতো ভাই তাইজুল ইসলাম বলেন, আমরা সবাই মিলে গ্রামতলা গ্রামে বসবাস করতাম। তিন বছর আগে আলিম আনিপুকুর বাজারে এসে নতুন বাড়ি করে বসবাস করছেন। প্রথম স্ত্রীর ছেলে রেজভি প্রায় জমির ভাগ নিতে বাড়িতে এসে বাবার সঙ্গে ঝগড়া করতো। হঠাৎ সোমবার রাতে এসে কুড়াল দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে পালিয়ে যায়। আলিমকে প্রথমে কালাই হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চিকিৎসকরা তাকে বগুড়ায় স্থানান্তর করলে আজ সকালে মারা যান। আমরা তার ছেলে ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করবো।

স্থানীয় ইউপি সদস্য ও নিহতের ভগ্নিপতি হেলাল উদ্দিন বলেন, আলিমের ছেলে প্রায়ই জমির ভাগ নিতে বাড়িতে এসে বাবার সঙ্গে ঝগড়া-বিবাদে জড়িয়ে যেত। এর আগে আলিম আমাকে এ বিষয়ে জানিয়েছিল। আমি ছেলেকে ডেকে বুঝিয়ে বলেছি। এরপরও সোমবার রাতে এসে ছেলে তার বাবা ও সৎ মাকে কুড়াল দিয়ে আঘাত করেছে। এরকম দুর্ধর্ষ ছেলে আর কোথাও দেখিনি। আজ জমির জন্যই ছেলের হাতে বাবার প্রাণ গেলো। এই ছেলের কঠিন বিচার দাবি করছি।

বাজারের মুদি দোকানি আতিকুর রহমান বলেন, দোকানের পাশেই তাদের বাড়ি। গভীর রাতে বাড়িতে চিৎকারের শব্দ পাই। উঠে দেখি, ঘরের ভেতরে আলিম ও তার স্ত্রী মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। তখন আমি জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল দিয়ে জানাই। এরপর কালাই থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে।  

কালাই থানার ওসি ওয়াসিম আল বারী বলেন, চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ সকালে মারা যাওয়ার খবর পেয়েছি। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।