নির্বাচনের খরচ জোগাতে আত্মীয়স্বজন থেকে ধারদেনা করছেন কোটিপতি প্রার্থী

বগুড়া-৩ (আদমদীঘি-দুপচাঁচিয়া) আসনে জাতীয় পার্টির (লাঙ্গল) সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম তালুকদার গত পাঁচ বছরের ব্যবধানে লাখপতি থেকে কোটিপতি হয়েছেন। তিনি কোটিপতি হলেও আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের খরচ জোগাতে আত্মীয়স্বজনদের কাছে ধারদেনা করছেন। ৮০ লাখ টাকার গৃহঋণসহ বর্তমানে তার অর্থসম্পদ রয়েছে এক কোটি ৪৮ লাখ ২৪ হাজার ২০০ টাকার।

বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম তালুকদার পেশায় আইনজীবী। তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের উপদেষ্টা। ছেলে মারুফ ইসলাম তালুকদার প্রিন্স দুপচাঁচিয়া উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি। নূরুল ইসলাম তালুকদার গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির প্রার্থী হিসেবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে ধানের শীষসহ সাত প্রার্থীকে পরাজিত করে লাঙ্গল মার্কা নিয়ে নির্বাচিত হন। সেই নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা অনুসারে তিনি ১৯৯৪ সালের একটি হত্যা মামলায় খালাস পেয়েছেন। কৃষি খাত থেকে বছরে আয় ৪৮ লাখ টাকা, পেশা থেকে আয় এক লাখ ৮২ হাজার ৪০০ টাকা। সংসদ সদস্যের সম্মানী ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা। নগদ টাকার পরিমাণ ১৫ লাখ টাকা। ব্যাংক/আর্থিক প্রতিষ্ঠানে নিজের জমা এক লাখ, স্ত্রীর ৩০ হাজার ও নির্ভরশীলের ৫০ হাজার টাকা।

নিজের ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের জিপ গাড়ি ও নির্ভরশীলের এক লাখ ২৫ হাজার টাকার মোটরসাইকেল, স্ত্রীর ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ১৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও নির্ভরশীলের ৫০ হাজার টাকা মূল্যের পাঁচ ভরি স্বর্ণালংকার। নিজের ইলেকট্রনিক সামগ্রী তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ও নির্ভরশীলের ৩২ হাজার টাকা মূল্যের একটি কম্পিউটার। এ সময় তার অর্থসম্পদের পরিমাণ ছিল ৬৩ লাখ ৪০ হাজার ৪০০ টাকা। স্ত্রীর এক লাখ পাঁচ হাজার ও নির্ভরশীলের দুই লাখ ৫৭ হাজার টাকার।

এদিকে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি জাতীয় পার্টির প্রার্থী। গত ২৭ নভেম্বর দাখিল করা হলফনামায় উল্লেখ করেন, বছরে তার কৃষি খাতে আয় ৭০ হাজার ২০০ টাকা, পেশা থেকে তিন লাখ ৩০ হাজার টাকা, সংসদ সদস্য হিসেবে সম্মানী ছয় লাখ ৬০ হাজার টাকা। এখন তার নগদ টাকা বেড়ে ২৫ লাখ টাকা হয়েছে। ব্যাংকে নিজ নামে জমা ৩০ লাখ টাকা ও নির্ভরশীলের সাত লাখ ৫০ হাজার টাকা।

নিজের ৩৫ লাখ টাকা মূল্যের জিপ ও নির্ভরশীলের সোয়া লাখ টাকা মূল্যের মোটরসাইকেল রয়েছে। স্ত্রীর ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের ১৫ ভরি স্বর্ণালংকার ও নির্ভরশীলের ৫০ হাজার টাকা মূল্যের ১০ ভরি স্বর্ণালংকার। নিজের ইলেকট্রনিক সামগ্রী পাঁচ লাখ ৫০ হাজার টাকার ও নির্ভরশীলের একটি কম্পিউটার ৩২ হাজার টাকার। চার বিঘা কৃষিজমি চার হাজার টাকা ও ১০ হাজার টাকা মূল্যের চার শতক অকৃষিজমি রয়েছে।

৪২ লাখ টাকা মূল্যের ২১০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট এবং স্ত্রীর পার্কিং প্লেসসহ একটি গাড়ি (মূল্য নেই) রয়েছে। যৌথ মালিকানায় চার হাজার টাকা মূল্যের এক বিঘা জমি আছে। এ ছাড়া নূরুল ইসলামের ঢাকার ধানমন্ডির আইএফআইসি ব্যাংক লিমিটেডে গৃহঋণ রয়েছে ৮০ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে নিজের অর্থসম্পদের পরিমাণ এক কোটি ৪৮ লাখ ২৪ হাজার ২০০ টাকা। স্ত্রীর ৭৫ হাজার টাকা ও নির্ভরশীলের নয় লাখ ৫৭ হাজার টাকা। পাঁচ বছরে অর্থসম্পদ বেড়েছে ৮৪ লাখ ৮৩ হাজার ৮০০ টাকার। স্ত্রীর এক লাখ ২৫ হাজার থাকলেও এখন কমে ৭৫ হাজার হয়েছে। এ ছাড়া নির্ভরশীলের দুই লাখ ৫৭ হাজার থেকে বেড়ে নয় লাখ ৫৭ হাজার অর্থাৎ সাত লাখ ৫৭ হাজার টাকা বেড়েছে।

অন্যদিকে, আরপিও অনুসারে দলীয় অনুদানসহ একজন প্রার্থীর নির্বাচনি খরচ ২৫ লাখ টাকার বেশি নয়। এ পরিমাণ টাকা নুরুল ইসলাম তালুকদারের রয়েছে। এরপরও তিনি হলফনামায় নির্বাচনি ব্যয় বহনের জন্য স্বজনদের কাছে আট লাখ টাকা ধার নেওয়ার কথা উল্লেখ করেন। এর মধ্যে জামাতা কাজী সিরাজুল ইসলামের কাছে দুই লাখ টাকা, ভাই আবুল কালাম আজাদ তালুকদারের কাছে দুই লাখ, রেজাউল ইসলাম তালুকদারের কাছে দুই লাখ ও আবদুল আজিজের কাছে দুই লাখ টাকা।

নুরুল ইসলাম তালুকদার জানান, নির্বাচনে খরচ করার মতো পর্যাপ্ত টাকা তার নেই। তাই তিনি স্বজনদের কাছ থেকে টাকা ধার করছেন। তিনি তার নির্বাচনে জয়লাভের জন্য সকলের দোয়া চেয়েছেন।