যমুনার চরে গাড়ল পালনে সফলতা, ঝুঁকছেন অনেকে

বগুড়ার সারিয়াকান্দির যমুনার চরে গড়ে উঠেছে মরুর দেশের গাড়লের খামার। এ জাতের গাড়ল পালন করে অনেকেই সফল হয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আশরাফ আলী। তাকে অনুসরণ করে তার উপজেলায় আরও ২৫টি গাড়লের খামার গড়ে উঠেছে। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ১৯টি খামার গড়তে সহযোগিতা করেছেন তিনি।

বগুড়ার সারিয়াকান্দি উপজেলার ধাপ গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত সিভিল প্রকৌশলী আশরাফ আলী আগে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ২০২০ সালে তিনি অবসর নেন। বেকারত্ব যখন তাকে ঘিরে ধরে, তখন তার মাথায় আসে গাড়ল পালনের চিন্তা। পরের বছরেই তিনি যশোরের বেনাপোল থেকে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা করে ৩০টি গাড়ল কেনেন। যার কাছ থেকে গাড়লগুলো কিনেছেন, তিনি আবার সেগুলো ভারতের রাজস্থান থেকে সংগ্রহ করেছিলেন।

আশরাফ আলী খামারের নাম দিয়েছেন ‘যমুনা গাড়ল খামার’। গত দুই বছরের ব্যবধানে তার খামারে এখন গাড়ল রয়েছে ১৫০টি। ইতোমধ্যে ৩৫ লাখ টাকার গাড়ল বিক্রি করেছেন তিনি। কেজিপ্রতি লাইভ ৫০০ টাকা দরে কিনে নেন ক্রেতারা। আর খুচরা মাংস কেজিপ্রতি বিক্রি করেন এক হাজার টাকা।

অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আশরাফ আলীর খামার

আশরাফ আলীকে সহযোগিতা করেন তার ছেলে নাজমুস শাহাদত শাওন। তিনি সারিয়াকান্দি উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত।

তিনি জানান, কাজের অবসরে তিনি তার বাবার খামারের সার্বিক বিষয় দেখাশোনা করেন। দুজন কর্মচারী ছাড়াও খামারে সার্বক্ষণিক একজন গ্রাম্য চিকিৎসক রয়েছেন। এ ছাড়া রোগব্যাধি হলে উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ পেয়ে থাকেন থাকেন।

তিনি আরও জানান, গাড়লের মাংস গন্ধহীন। খেতেও স্বাদ। কোলেস্টেরলমুক্ত। এ কারণে দিন দিন গাড়লের মাংসের চাহিদা বাড়ছে। খুচরা বিক্রি ছাড়াও তারা বগুড়া শহরের বিভিন্ন হোটেল-মোটেল ও রেস্তোরাঁয় গাড়ল সরবরাহ দিয়ে থাকেন। চাহিদা বেশি থাকায় ঠিকমতো সরবরাহ দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।

নতুন উদ্যোক্তাদের বিষয়ে তিনি জানান, উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ১৯টি গাড়ল খামার গড়তে তারা সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়া তাদের অনুসরণ করে সারিয়াকান্দির বিভিন্ন গ্রামে ২৫টি গাড়লের খামার গড়ে উঠেছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় নতুন উদ্যোক্তরা গাড়ল খামার দিতে চাইলে সহযোগিতার আশ্বাস দেন তিনি।

পুরুষ গাড়ল

সারিয়াকান্দি উপজেলার কাজলা ইউনিয়নের জামথল চরের গাড়ল খামারি মাসুদ মিয়া জানান, তিনি আশরাফ আলীকে দেখে নিজে খামার গড়েছেন। বর্তমানে তার খামারে শতাধিক গাড়ল রয়েছে। গত কয়েক মাসে তিনিও অনেক লাভবান হয়েছেন।

গাড়ল দেশি ছাগলের মতো লতা, পাতা, ঘাস সব কিছু খায়। একটা পুরুষ গাড়ল ৬০ থেকে ৬৫ কেজি ও নারী গাড়ল ৩০ থেকে ৩৫ কেজি হয়। জবাই করার পর প্রতিটি গাড়ল থেকে অর্ধেকের কিছু বেশি গোশত পাওয়া যায়।

ভেড়ার উন্নত জাতটিই গাড়ল। হুবহু ভেড়ার মতো দেখতে হলেও গাড়ল ও ভেড়ার মধ্যে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। গাড়লের লেজ ও কান ভেড়ার চেয়ে কয়েক গুণ বড়। আকারেও বড় গাড়ল। পূর্ণবয়স্ক একটি ভেড়া থেকে ১৭ থেকে ২৫ কেজি পর্যন্ত মাংস পাওয়া যায়। কিন্তু পূর্ণবয়স্ক একটি গাড়লের ৩০ থেকে ৪০ কেজি মাংস হয়। আর যেকোনও প্রাণীর মাংস অপেক্ষা গাড়লের মাংসের স্বাদও ভালো। তবে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ভারতীয় জাতের সঙ্গে দেশীয় ভেড়ার ক্রস করে গাড়ল উৎপাদন করা হয়।

পাশের চরে ঘাস খেতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে গবাদিপশুগুলোকে

রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক সারিয়াকান্দি শাখার ব্যবস্থাপক শরিফুল ইসলাম জানান, কোলেস্টেরল কম থাকায় তিনি প্রায় গাড়লের মাংস কেনেন। এ পশুর মাংসে চর্বি খুবই কম থাকায় খেতেও সমস্যা হয় না।

উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. শাহ আলম বলেন, ‘গাড়লের মাংস মানুষের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। অবসরপ্রাপ্ত প্রকৌশলী আশরাফ আলীকে অনুসরণ করে এ উপজেলার হাটফুলবাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় ২৫টির মতো গাড়লের খামার গড়ে উঠেছে। পুরো উপজেলায় তিন হাজারের বেশি গাড়ল রয়েছে। গাড়ল পালনে খামারিদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদান অব্যাহত রয়েছে।’