বগুড়ার তিন উপজেলায় প্রার্থীর ছড়াছড়ি

বিএনপির না, প্রার্থী দেবে জামায়াত

প্রথম ধাপের নির্বাচনে তফসিল ঘোষণার পর বগুড়ার গাবতলী, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলায় চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীর ছড়াছড়ি দেখা দিয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীরা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছেন। নির্বাচনি এলাকার সর্বত্রই কে প্রার্থী, কে নির্বাচিত হবেন, পদে থেকে কে ভালো কাজ করেছেন এসব নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে।

বগুড়ার সিনিয়র জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মাহমুদ হাসান জানান, বৃহস্পতিবার প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণার পর গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। সে মোতাবেক গাবতলী, সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমার শেষ সময় ১৫ এপ্রিল, বাছাই ১৭ এপ্রিল, ১৮-২০ এপ্রিল আপিল, ২১ এপ্রিল আপিল নিষ্পত্তি, প্রত্যাহারের শেষ সময় ২২ এপ্রিল, প্রতীক বরাদ্দ ২৩ এপ্রিল। ৮ মে সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।

চেয়ারম্যান পদে জামানত এক লাখ ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৭৫ হাজার টাকা। এছাড়া প্রতিটি ইউনিয়ন ও পৌরসভা ওয়ার্ডের ভোটার তালিকার সিডির মূল্য ৫০০ টাকা করে। তিনি আরও জানান, আগামী ২৫ মার্চ কেন্দ্র তালিকা চূড়ান্ত হবে। ঢাকা থেকে আপডেট ভোটার তালিকা দিলে সিডিতে তুলে বিক্রি করা হবে।

এদিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সম্ভাব্য প্রার্থীরা সরব ছিলেন। অনেকে ফেসবুক, সরেজমিন ও নানা মাধ্যমে তাদের প্রার্থিতা জানান দিতে শুরু করেন। বৃহস্পতিবার প্রথম ধাপের তফসিল ঘোষণার পরপরই সম্ভাব্য চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা মাঠে নেমেছেন। প্রার্থীদের কারণে এলাকায় ইসলামি জলসা, পূজা, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, পিকনিক, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন খেলাসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন বেড়েছে।

তিন উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে এখন পর্যন্ত বর্তমান ও নতুন মিলিয়ে অন্তত ১৩, ভাইস চেয়ারম্যান ১১ ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১০ জন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এদের অধিকাংশই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের দায়িত্বশীল নেতা। বিএনপি কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের দিকে চেয়ে থাকলেও জামায়াত নির্বাচনে অংশগ্রহণের সবুজ সংকেত পেয়েছে। তবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে চাঁদা দিতে অপরাগ অনেকে ঈদের পর তাদের প্রার্থিতা জানান দেবেন।

এখন পর্যন্ত চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন-গাবতলী উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান ও বগুড়া শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি রফি নেওয়াজ খান রবিন, হাজি দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক কৃষিবিদ অরুণ কান্তি রায় সিটন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাহানুর ইসলাম সাকিল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আবদুল্লাহের বাকী পাইকার ও সাবেক সেনা কর্মকর্তা আতোয়ার রহমান রানু। ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম মুক্তা, যুবলীগ নেতা মিঠু পাইকার, পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন দিলু এবং জামায়াত নেতা আবদুল মজিদ। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে রয়েছেন বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা মহিলা লীগের সভাপতি রেকসেনা জালাল, সাধারণ সম্পাদক নাজমা বেগম ও সাবেক ইউপি সদস্য ফেরদৌসী বেগম।

সারিয়াকান্দি উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল করিম মন্টু আবারও নির্বাচন করবেন। তিনি ছাড়াও বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনের সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নানের ছেলে সাখাওয়াত হোসেন সজল ও উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সালাম প্রার্থী হবেন।

ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান যুবলীগ সভাপতি আইয়ুব আলী তরফদার, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি লিখন মিয়া, উপজেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ইউনুস আলী ও শ্রমিক লীগের সভাপতি সাখাওয়াত হোসেন সকোর নাম শোনা যাচ্ছে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে এখন পর্যন্ত বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহিনুর বেগমের নাম প্রচার হচ্ছে।

এছাড়া সোনাতলা উপজেলায় বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মিনহাদুজ্জামান লিটন আবারও প্রার্থী হবেন। তিনি ছাড়া জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক জুলফিকার রহমান শান্ত, বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন, উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জিয়াউল হক লিপন ও একেএম আহসান হাবিব রাজার নাম শোনা যাচ্ছে।

এ উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান পদে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ফিদা হাসান খান টিটো, যুবলীগ সদস্য মাসুদ রানা ও জামায়াতের এনামুল হক মন্ডলের প্রার্থী হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে প্রার্থীর সংখ্যা বেশি।

এখন পর্যন্ত সোনাতলা পৌর মহিলা লীগের সাবেক আহ্বায়ক ওয়াসিয়া আকতার রুনা, জোড়গাছা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইশরাত আকতার ইমু, মহিলা লীগ নেত্রী কুহেলী চক্রবর্তী, উপজেলা মহিলা লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ঝর্ণা বেগম, জেলা মহিলা লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান জান্নাতুল ফেরদৌসী রূম্পা ও বিএনপি নেত্রী অঞ্জনা খানের নাম প্রচারিত হচ্ছে।

বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম বাদশা জানান, তারা এখন পর্যন্ত এ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিতে রাজি নন। তারপরও কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাবতলী উপজেলা জামায়াতের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল মজিদ জানান, তার সংগঠন উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেবে। এ ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে অনুমতি দেওয়ায় তিনি গাবতলী উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন।

আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা জানান, এবারের নির্বাচনে নৌকা প্রতীক থাকছে না। তারপরও দল কাউকে না কাউকে পরোক্ষ সমর্থন দেবে। তাই তারা প্রার্থী হবেন। নিজ নিজ যোগ্যতায় ভোট চাইবেন।

বগুড়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি, শিবগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান মীর শাহে আলম জানান, যদি বিএনপির হাইকমান্ড উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয় এবং আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আবারও ভোট করবো।