স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণের মামলায় কলেজশিক্ষকের বিরুদ্ধে চার্জশিট

বগুড়ার ধুনটে স্কুলছাত্রী ধর্ষণ মামলায় একমাত্র আসামি কলেজ শিক্ষক মুরাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছেন তদন্ত কর্মকর্তা। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) বগুড়ার এসআই সবুজ আলী রবিবার (২৪ মার্চ) বিকালে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মোমিনের আদালতে এই প্রতিবেদন জমা দেন।

মামলার প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ধুনট থানার সাবেক ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে আলামত নষ্টের অভিযোগের বিভাগীয় অনুসন্ধান চলছে। অনুসন্ধানের ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

অভিযোগে জানা গেছে, এক গৃহবধূ ২০২২ সালের ১২ মে বগুড়ার ধুনট থানায় উপজেলার শৈলমারী গ্রামের মৃত মতিউর রহমানের ছেলে স্থানীয় বেসরকারি কলেজের শিক্ষক মুরাদুজ্জামানের (৪৮) বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। তিনি এজাহারে উল্লেখ করেন, মুরাদুজ্জামান তার বাসার নিচতলার উত্তর পাশের ফ্লাটে ভাড়া থাকতেন। বাদী ও তার স্বামী পেশায় শিক্ষক হওয়ায় তারা দিনের অধিকাংশ সময় বাইরে থাকতেন। বাসায় শুধু তাদের চার ছেলেমেয়ে থাকতো। বাড়িতে বাবা-মা না থাকার সুযোগে আসামি মাঝে মাঝে তাদের শিশু সন্তানকে চকলেট দেওয়ার নামে তার ফ্লাটে নিয়ে যেতেন।

ভুক্তভোগী দশম শ্রেণির ছাত্রী বিভিন্ন সময় ছোট ভাইকে আনতে মুরাদুজ্জামানের ফ্লাটে যেত। একপর্যায়ে আসামী গত ২০২২ সালের ৩ মার্চ বেলা ১১টার দিকে ওই ছাত্রীকে ফ্লাটে নিয়ে ধর্ষণ করে। পরে ২৪ মার্চ সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আবারও ধর্ষণ করে। আসামি ধর্ষণের দৃশ্য তার ফোনে ধারণ করে ১২ এপ্রিল বেলা সাড়ে ১০টার দিকে বাসায় ঢুকে ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। ওই ছাত্রী চিৎকার দিলে বাদীর বোন আসামিকে ধরে ফেলেন। তখন তাদেরকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায় অভিযুক্ত শিক্ষক। এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর মা ধুনট থানায় মেয়েকে ধর্ষণ ও অশ্লীল চিত্র ধারণের মামলা করেন।

থানার তৎকালীন ওসি কৃপা সিন্ধু বালা নিজেই তদন্তের দায়িত্ব নেন। বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি থানা থেকে ডিবি পুলিশ হয়ে পিবিআই বগুড়া কার্যালয়ে স্থানান্তর করা হয়।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই সবুজ আলী জানান, পিবিআই প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর তদন্ত শুরু করেন। ১ নভেম্বর আদালত আসামির দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ৯ নভেম্বর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

তদন্ত কর্মকর্তা আরও জানান, এজাহারে প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে আলামত নষ্টের অভিযোগটি চার দফা বিভিন্ন ফরেনসিক বিভাগে নাকচ হয়। তার তিনটি মোবাইল ফোনে ছাত্রীর কোনও অশ্লীল ছবি পাওয়া যায়নি। তদন্ত শেষে রবিবার বিকালে বগুড়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল মোমিনের আদালতে একমাত্র আসামির বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেন। এ ছাড়া প্রথম তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসি কৃপা সিন্ধু বালার বিরুদ্ধে ফোন থেকে আলামত মুছে ফেলার বিভাগীয় অনুসন্ধান চলছে। উক্ত অনুসন্ধানের ফলাফলের ভিত্তিতে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।