‘এমপি হতে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, এটা তুলবো, এটুকু অন্যায় করবো-ই’

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খরচ হওয়া টাকা অনিয়ম করে তোলার ঘোষণা দিয়েছেন নাটোর-১ আসনের সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ। তার এমন বক্তব্যের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে। এ নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। 

গত মঙ্গলবার (২৬ মার্চ) লালপুর উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে এ ঘোষণা দেন তিনি।

ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে আবুল কালাম আজাদকে বলতে শোনা যায়, ‘আমার পাঁচটা বছরের (২০১৪-২০১৮) বেতন ভাতার টাকা ছাড়া কোনও সম্পদ ছিল না। আগামীতেও থাকবে না। এবার (দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে) এক কোটি ২৬ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকা আমি তুলবো। যেভাবেই হোক তুলবো-ই। এটুকু অনিয়ম আমি করবো-ই। এটুকু অন্যায় করবো, আর করবো না। ওই সময় (আগেরবার) এক টাকাও খরচ হয়নি আমার। শুধু ব্যাংকে ২৫ লাখ টাকা জমা রাখতে হয়, ওটা রেখেছি। এক টাকাও খরচ নাই, ২৫ লাখ টাকা তুললাম। ট্যাক্স ফ্রি ২৭ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি কিনেছিলাম। চাইলে এক কোটি টাকা দিয়ে কিনতে পারতাম। আমার যখন টাকা নাই তখন ২৭ লাখ টাকা দিয়ে কিনেছি। এবার আমি কিনবো, ওই টাকা দিয়ে কিনবো। ওই যে টাকা, ওই টাকা তুলে নেবো আমি। খালি এক কোটি ২৬ লাখ টাকা তুলবো।’

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন লালপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আখতার। তিনি বলেন, ‘কীভাবে সংসদ সদস্য সবার সামনে এমন কথা বললেন, তা আমি জানি না। এমন কথাতে আমিও বিব্রত হয়েছি। অনুষ্ঠানে আসা সবাই বিব্রত হয়েছেন। আরও দায়িত্বশীল হয়ে বক্তব্য দেওয়া উচিত ছিল এমপির।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সংসদ সদস্য মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘এমন কোনও কথা আমি বলিনি।’ বলেই ফোন রেখে দেন। এরপর একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি।

তার বক্তব্যের সমালোচনা করে দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি নাটোর জেলা শাখার সভাপতি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘একজন সংসদ সদস্যের প্রকাশ্যে অনিয়ম-দুর্নীতি করার ঘোষণা দেওয়া দুর্ভাগ্যজনক। এমন বক্তব্যে তার সহকারী এবং দলীয় নেতাকর্মীরা দুর্নীতিতে উৎসাহিত হবে। এটা একদিকে যেমন পরিষ্কারভাবে শপথের লঙ্ঘন অন্যদিকে নির্বাচনি বিধিরও লঙ্ঘন। নির্বাচনি বিধি অনুযায়ী একজন সংসদ সদস্য এক কোটি ২৬ লাখ টাকা ব্যয় করতে পারেন না। তিনি ব্যয় করেছেন, আবার তা অনিয়ম করে তোলার ঘোষণাও দিলেন।’

প্রসঙ্গত, আবুল কালাম আজাদ নাটোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি। ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকার প্রার্থী শহিদুল ইসলাম বকুলকে হারিয়ে এমপি হন আবুল কালাম।