প্রকৌশলীদের গাফিলতির কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ভবনের ছাদে ধস

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্মাণাধীন ১০তলা শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হল মিলনায়তনের একটি অংশ ধসে পড়ার ঘটনায় দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রকৌশলীদের গাফিলতি ছিল। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই প্রকৌশলীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। গত ২৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫৩০তম সিন্ডিকেট সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রবিবার (৩১ মার্চ) এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম ও নাম প্রকাশ না করা শর্তে একাধিক সিন্ডিকেট সদস্য।

সিন্ডিকেট সদস্যরা জানান, মিলনায়তনের একাংশ ধসে পড়ার ঘটনায় নির্মাণকাজে গাফিলতি পেয়েছে তদন্ত কমিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। ওই প্রকল্পে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দায়িত্বপ্রাপ্ত দুই প্রকৌশলীকে প্রত্যাহার ও আহত শ্রমিকদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আহতদের চিকিৎসাব্যয় ও পর্যাপ্ত আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

নির্মাণকাজে কী ধরনের গাফিলতি পেয়েছে তদন্ত কমিটি এমন প্রশ্নের জবাবে উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘শাটারিংয়ে ব্যবহৃত খুঁটির রড মানসম্মত ছিল না। কাঁচা পিলারের ওপর ছাদ ঢালাই দেওয়ায় ধসে পড়েছে। ভবনের অন্যান্য অংশেও এ ধরনের কাজ হয়েছে কিনা সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছে তদন্ত কমিটি। কিন্তু অন্যান্য অংশে গাফিলতি খুঁজে পায়নি তারা। ওই ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে। এছাড়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে পরবর্তীতে এসব বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’ 

এর আগে গত ৩০ জানুয়ারি দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাদার বখশ হলের সামনে নির্মাণাধীন শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান হলের মিলনায়তনের একাংশ ধসে পড়ে। এ ঘটনায় ৯ জন আহত হন। ওই দিন রাতেই জরুরি সভা ডেকে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কমিটিকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়। তবে ঘটনার চার দিন পর ৪ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছে চিঠি পাঠানো হয়। ওই দিন থেকে পরবর্তী সাত কার্যদিবস ১২ ফেব্রুয়ারি শেষ হলেও কমিটি প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। পরে কমিটির সদস্যদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন করে আরও সাত কার্যদিবস বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফার সময় শেষ হওয়ার আগে ২৫ ফেব্রুয়ারি তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়।  

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দফতর সূত্রে জানা যায়, শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামান আবাসিক হল ও ২০ তলাবিশিষ্ট একাডেমিক ভবনের নির্মাণকাজ করছে রূপপুরের ‘বালিশ-কাণ্ডে’ আলোচিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মজিদ সন্স কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্মাণাধীন এই দুই ভবনে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুজন শ্রমিকের মৃত্যু হয়। এর আগে বিভিন্ন সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ ওঠে।