বেসরকারি সংস্থা ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (ইএসডিও) ও পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি) থেকে নেওয়া কিস্তির ঋণের চাপে নীলফামারীতে মো. নজরুল ইসলাম (৫০) নামে এক ব্যক্তি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) দুপুর দেড়টার দিকে ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ী ইউনিয়নের চিলাহাটি কারেঙ্গাতলী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নজরুল ইসলাম ওই গ্রামের মৃত আফজালুল হকের ছেলে। তিনি তিন ছেলে ও এক মেয়ের বাবা ছিলেন। বুধবার (০২ অক্টোবর) দুপুরে আইনি প্রক্রিয়া শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। ডোমার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আরিফুল ইসলাম এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।
নজরুল ইসলামের স্ত্রী মেরিনা বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘ইএসডিও, পপি, জাগরণ ও স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে ১৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা সুদের ওপর ঋণ নিয়েছেন স্বামী। পরিবারের আত্মীয়-স্বজন এমনকি ভাগনি-ভাতিজার নামেও এসব ঋণ নিয়েছেন। গত কয়েকদিন থেকে এনজিওর লোকজন ও মহাজনরা বাড়িতে এসে কিস্তির টাকা দেওয়ার জন্য হুমকি-ধমকি এবং মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে অনেক চাপ দেন। তাদের মামলার ভয়ে আমার স্বামী ঘরের বাইরে যেতে সাহস হারিয়ে ফেলেন। মানসিক অশান্তিতে ছিলেন। দিনরাত ঘরবন্দি ছিলেন। মঙ্গলবার দুপুরে ঘরের মধ্যে গলায় ফাঁস দেন।’
কারেঙ্গাতলী গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, পারিবারিক টানাপোড়েনে পড়ে এনজিও ও স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে সুদের ওপর অনেক টাকা নিয়েছেন নজরুল। এক এনজিও থেকে টাকা তুলে আরেক এনজিওর কিস্তি পরিশোধ করছিলেন। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ ধরে কিস্তি পরিশোধ করতে না পারায় চাপ দেন এনজিওর লোকজন এবং সুদি মহাজনরা। মামলার হুমকি দেওয়ায় মানসম্মানের ভয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন নজরুল। এনজিওর সাপ্তাহিক কিস্তি এই গ্রামের মানুষের এখন গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ভোগডাবুড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজুল ইসলাম কালু বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নজরুল ইসলাম বিভিন্ন এনজিও থেকে বিভিন্ন নামে মোটা অংকের টাকা কিস্তির ওপরে নিয়েছেন। ঋণের বোঝা এত বেশি ছিল যে, তার পক্ষে পরিশোধ করা সম্ভব ছিল না। একপর্যায়ে এনজিওর লোকজন এবং সুদি মহাজনরা টাকার চাপ দিলে উপায় না পেয়ে পরিবারের কাউকে না জানিয়ে মঙ্গলবার দুপুরে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন। আইনি প্রক্রিয়া শেষে বুধবার দুপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।’
নজরুল ইসলামের ঋণের বিষয়ে জানতে ইকো-সোশ্যাল ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের ম্যানেজারের মোবাইল নম্বরে একাধিকবার কল দিয়ে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়। কিস্তির জন্য চাপ দেওয়ার বিষয়ে জানতে পিপলস ওরিয়েন্টেড প্রোগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশনের চিলাহাটি শাখার ম্যানেজার শাহিন আলমকে একাধিকবার কল দিলেও রিসিভ করেননি। এজন্য তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
ওসি আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘সব আইনি প্রক্রিয়া শেষে সকালে স্বজনদের কাছে নজরুলের লাশ হস্তান্তর করা হয়। দুপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।’