বাড়িতে ককটেল হামলার অভিযোগ

নাগরিক ঐক্যের ৯ জনের বিরুদ্ধে যুবদল নেতার মামলা

বগুড়ার শিবগঞ্জে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে বিএনপি ও নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীদের বিরোধ তুঙ্গে উঠেছে। দুপক্ষে সংঘর্ষ, মামলা ও পাল্টা মামলা চলছে। বিএনপি এলাকায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।

এ অবস্থায় শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে স্থানীয় মুগ্ধ স্কয়ারে নাগরিক সমাবেশে মান্নার উপস্থিত থাকার কথা। বাড়িতে ককটেল হামলার অভিযোগে উপজেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি রনি মিয়া শিবগঞ্জ থানায় ৯ জনের নাম উল্লেখ করে ১৬ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। এসব নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

শিবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুজ্জামান শাহিন জানান, আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে।

যুবদল নেতার মামলার আসামিরা হলেন- শিবগঞ্জ উপজেলা নাগরিক ঐক্যের যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সরকার, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈকত আমিন বিদ্যুৎ, উপজেলা নাগরিক যুব ঐক্যের সভাপতি অমিত হাসান, নেতা পিয়াল, লিপি বেগম, তোফা, সাগর, মোকাররম হোসেন খোকন এবং হারুনুর রশিদ।

অভিযোগে জানা গেছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি মধ্যরাতে একুশের প্রথম প্রহরে নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীরা উপজেলা পরিষদের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা জানাতে যান। এ সময় বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে এমন অভিযোগ তুলে নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা চালায়। তখন উপজেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মীর মুনের নেতৃত্বে উপজেলা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলামকে ছুরিকাহত করা হয়। তিনি বর্তমানে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তাকে ঢাকায় রেফার্ড করার কথা।

এ হামলার জন্য নাগরিক ঐক্যের নেতারা উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলমকে দায়ী করে আসছেন। নাগরিক ঐক্যের উপজেলা যুগ্ম আহ্বায়ক এনামুল হক সরকার উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওহাবকে প্রধান আসামি করে ৩০ জনের বিরুদ্ধে শিবগঞ্জ থানায় মামলা দেন। কিন্তু পুলিশ আজ পর্যন্ত সে মামলা গ্রহণ করেনি।

এ প্রসঙ্গে ওসি জানান, অনলাইনে পাঠানো মামলা রেকর্ডের সুযোগ নেই।

এদিকে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় শিবগঞ্জ সদর ইউনিয়নের আবদুল বাহাপুর গ্রামে উপজেলা যুবদলের সিনিয়র সহসভাপতি রনি মিয়ার বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর, ককটেল বিস্ফোরণ ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। তাৎক্ষণিক প্রতিবাদে রনির দলীয় লোকজন আমতলি এলাকায় বগুড়া-জয়পুরহাট সড়ক অবরোধ করেন। এ ছাড়া এ হামলার প্রতিবাদে বিএনপি ও জামায়াত নেতারা গত ২৫ ফেব্রুয়ারি উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা বর্জন করেন।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি মীর শাহে আলম হামলার সুষ্ঠু বিচার না করা পর্যন্ত নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে শিবগঞ্জে ঢুকতে না দেওয়ার ঘোষণা দেন। এ ছাড়া বিএনপি ও জামায়াত উপজেলা প্রশাসনের কোনও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ও সহযোগিতা না করার ঘোষণা দেওয়া দেয়। নাগরিক ঐক্যের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার না করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান ও থানার ওসি শাহিনুজ্জামান শাহিনের কঠোর সমালোচনা করা হয়।

অপরদিকে, নাগরিক ঐক্য জেলা শাখার অন্যতম সমন্বয়ক সাইদুর রহমান সাগর প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, বিএনপি নেতা মীর শাহে আলমের লোকজন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক শহিদুল ইসলাম ও তাকে ছুরিকাঘাত করেছেন।

এ ব্যাপারে থানায় মামলা করা হলেও পুলিশ তা রেকর্ড করেনি। তিনি মাহমুদুর রহমান মান্নাকে শিবগঞ্জে প্রবেশে বাধা দেওয়ার ঘোষণায় নিন্দা জানিয়ে বলেন, ‘মান্না জাতীয় নেতা। এলাকার উন্নয়নে কাজ করছেন। তাকে শিবগঞ্জের মাটিতে প্রবেশ ঠেকানো যাবে না। তিনি আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হবেন।’

এদিকে দুটি রাজনৈতিক দলের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না তার নির্বাচনি এলাকা শিবগঞ্জে আসছেন। শুক্রবার বিকাল ৩টার দিকে স্থানীয় মুগ্ধ স্কয়ারে উপজেলা শাখা আয়োজিত নাগরিক সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে। মাহমুদুর রহমান মান্না প্রধান অতিথি ও কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সাকিব আনোয়ার বিশেষ অতিথি থাকবেন। শিবগঞ্জ উপজেলা নাগরিক ঐক্যের সদস্যসচিব আবদুল বাসেত বাদশা সভাপতিত্ব ও পৌর সভাপতি রুহুল আমিন সভার সঞ্চালনার দায়িত্ব পালন করবেন।