বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলা: মামলার আসামি মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধা

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগে করা মামলায় রাজশাহী মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার প্রয়াত আবদুল মান্নানকে আসামি করা হয়েছে। গত রবিবার নগরের বোয়ালিয়া থানায় আবদুল আলীম দুলাল (২২) নামের এক তরুণ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তিনি মামলার ৫৮ নম্বর আসামি।

মামলার ১ নম্বর আসামি রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। ২ নম্বর আসামি করা হয়েছে রাজশাহী-২ (সদর) আসনের সাবেক স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান বাদশার ছেলে রুয়েট কর্মকর্তা মাহমুদুর রহমান দীপনকে। এ ছাড়া ১২৭ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৩০০ থেকে ৩৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়।

মামলার বাদী আবদুল আলীম নগরের রাজপাড়া থানার মোল্লাপাড়া মহল্লার মুশারফ হোসেনের ছেলে। আলীম জামায়াতে ইসলামীর সহযোগী সংগঠন বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের কর্মী। আর তার ভাই শফিকুল ইসলাম জামায়াতে ইসলামীর কর্মী। এজাহারে বলা হয়েছে, গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে আবদুল আলীম নগরের আলুপট্টি এলাকায় গুলিবিদ্ধ হয়েছিলেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলেন। তার বাড়ি রাজশাহী নগরের রানীনগর এলাকায়। রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র থাকা অবস্থায় তিনি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। গত ১৭ জানুয়ারি রাজধানী ঢাকার একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরদিন রাজশাহীর টিকাপাড়া গোরস্তানে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় তাকে দাফন করা হয়।

মৃত ব্যক্তিকে আসামি করার ব্যাপারে জানতে বাদী আবদুল আলীমের মোবাইলে যোগাযোগ করা হয়। এ সময় ফোন ধরেন তার বড় ভাই শফিকুল ইসলাম। শফিকুল বলেন, ‘আমি জামায়াতে ইসলামীর কর্মী। আমার ভাই আবদুল আলীম শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের সমর্থক। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার ওপর হামলার সময় আলীম গুলিবিদ্ধ হয়েছিল। সংগঠনের তদারকিতে মামলা করা হয়েছে। আমাদের মুরব্বিরা সবকিছু করেছেন। কোনও বিষয়ে কথা বলার থাকলে মহানগর জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক জসিম উদ্দিন সরকারের সঙ্গে কথা বলতে হবে।’

যোগাযোগ করা হলে জসিম উদ্দিন সরকার বলেন, ‘মামলা সম্পর্কে আমি তেমন কিছু জানি না। আমাকে আগে খোঁজ নিতে হবে। আগে খোঁজ নিই, তারপরে এ বিষয়ে বলতে পারবো।’

রাজশাহী মহানগর জামায়াতের মিডিয়া ও প্রেস সেক্রেটারি ইমন আশরাফ বলেন, মামলাটি জামায়াতের সাংগঠনিক সিদ্ধান্তে হয়নি। মুক্তিযোদ্ধা আবদুল মান্নান মারা গেছেন, সেটি আমিও জানি।

বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাক আহম্মেদ বলেন, ‘আসামির তালিকায় মৃত ব্যক্তি আছেন কিনা, তা আমার জানা নেই। এটা খোঁজ নিতে হবে। যদি এ রকম হয় তাহলে আমরা যাচাই করবো। মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের সময় মৃত মুক্তিযোদ্ধাকে অব্যাহতি দেওয়া হবে।’

এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে রাজশাহী জেলার সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ইয়াসিন আলী মোল্লা বলেন, ‘মরেও শান্তি নেই। মৃত বীর মুক্তিযোদ্ধােকে আসামি করা হয়েছে। তিনি জীবত অবস্থায় ভালো মানুষ ছিলেন। তার ক্লিনিকে অনেকে বিনামূল্য চিকিৎসা নিয়েছেন। তাকে আসামি করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’