রাজশাহীতে চাহিদার চেয়ে কোরবানির পশু বেশি, বিক্রি হবে ৩০২ হাটে

রাজশাহী বিভাগের ৩০২টি হাটে আসন্ন ঈদুল আজহা উপলক্ষে কোরবানির পশু বেচাকেনা হবে বলে জানিয়েছে বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দফতর। এসব হাটের মধ্যে ১৬১টি স্থায়ী এবং ১৪১টি অস্থায়ী।

বৃহস্পতিবার (১৫ মে) সরকারি এক তথ্য বিবরণীতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রাণিসম্পদ দফতরের বরাতে এতে বলা হয়, হাটগুলো মেডিক্যাল টিম দিয়ে তত্ত্বাবধান করা হবে। বিভাগের প্রতিটি জেলায় পশু কেনাবেচার জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী হাটসমূহে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে ও গাভির গর্ভ পরীক্ষা করতে ২১৩টি ভেটেরিনারি মেডিক্যাল টিম গঠন করা হয়েছে।

প্রাণিসম্পদ দফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর বিভাগে প্রায় ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত করেছেন কৃষক ও খামারিরা। এখন পশুর পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে তাদের। 

তবে গোখাদ্যের দাম বেশি হওয়ায় কোরবানির পশুর দামে প্রভাবের আশঙ্কা করছেন খামারিরা। যদিও সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এবারও রাজশাহী জেলায় চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত রয়েছে কোরবানির পশু।

রাজশাহী প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে চার লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৩ গবাদিপশু। এর মধ্যে গরু এক লাখ ১৫ হাজার ৭৪২, মহিষ চার হাজার ২৪০, ছাগল তিন লাখ ৪৬ হাজার ৭৬৩ এবং ভেড়া ৩০ হাজার ১৪৮টি। যা রাজশাহী জেলার চাহিদার তুলনায় বেশি।

কোরবানির পশু নিয়ে চলতি ও গত বছরের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার কোরবানিযোগ্য পশু বেড়েছে ৩০ হাজার ৬৯৭টি। ওই বছরটিতে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের দেওয়া তথ্যমতে, কোরবানিযোগ্য পশু ছিল চার লাখ ৬৬ হাজার ১৯৬টি। এর মধ্যে গরু ৮৩ হাজার ৩৬৫টি, মহিষ তিন হাজার ৭৬৯টি ও ছাগল তিন লাখ ৪২ হাজার ৭৫৩টি। সে হিসাবে এ বছর গরু বেড়েছে ৩২ হাজার ৩৭৭টি, মহিষ বেড়েছে ৪৭১টি ও ছাগল বেড়েছে চার হাজার ১০টি।

এ বছর বিভাগে প্রায় ৪৩ লাখ ৪৪ হাজার কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত করেছেন কৃষক ও খামারিরা

কৃষক ও খামারিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদুল আজহার আরও বেশ কয়েক দিন বাকি আছে। কোরবানিকে কেন্দ্র করে বাসা-বাড়ি ও খামারে লালন-পালন করা পশুর বাড়তি যত্ন নেওয়া হচ্ছে। খামারিরা গরু মোটাতাজাকরণের জন্য খাওয়াচ্ছেন ঘাস, ভুট্টা, খৈল ও ভুসিসহ পুষ্টিকর সব খাবার। আগামী সপ্তাহ থেকে পশু হাটে তোলা হবে। তবে গোখাদ্যের দাম বাড়ায় এবার পশুর দাম কিছুটা বেশি থাকতে পারে।

পবা উপজেলার হরিয়ান গ্রামের খামারি মিজানুর রহমানের খামারে ছয়টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে চারটি কোরবানির উপযোগী। অল্প সময় থাকায় তিনি বাড়তি পরিচর্যা নিচ্ছেন। মিজানুর রহমান বলেন, ‌‘গরুগুলো চার মাস ধরে লালন-পালন করছি। কোরবানির দুই সপ্তাহ আগে থেকে বিক্রি শুরু করবো। যদি খামারে বিক্রি না হয়, তাহলে হাটে তুলবো। ইচ্ছে আছে খামার থেকে বিক্রি করার। সব খাবারই কিনে খাওয়াতে হয়। গতবারের চেয়ে এবার পশুখাদ্যের দাম বেশি। ঘাস, ভুট্টা, খৈল ও বিভিন্ন ধরনের ভুসির দাম বেড়েছে। তাতে করে বোঝা যাচ্ছে, দাম কিছুটা বেশি হতে পারে। কারণ গরুর মাংসের দাম বেড়ে একটা জায়গায় স্থির হয়েছে। কিস্তু গোখাদ্যের দাম সপ্তাহ সপ্তাহ বাড়তেই আছে। এটা মনিটরিং করার কেউ নেই।’

একই উপজেলার খামারি সাজ্জাদ হোসেন বলেন, ‘বছরের অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় কোরবানির সময় পশুর দাম কিছুটা হলেও বেশি থাকে। কোরবানিতে বিক্রির জন্য অনেকে পশু পালন করে থাকেন। গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িতে একটি বা দুটি গরু আছে। গ্রামের মানুষ মাঠে কাজ করার পাশাপাশি সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে এগুলো পালন করেন। তবে বাইরে থেকে গরু না আনা হলে ভালো দাম পাওয়া যাবে।’

পবা উপজেলার মুদি দোকানি রহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ডালের ভুসির দাম বেড়েছে। কাটা খড়, ভুট্টার গুঁড়া, খৈলের দামও বেড়েছে। কয়েক মাস থেকে বাড়ছে গোখাদ্যের দাম। বছরের এই সময়টাতে দাম বাড়ে।’

এবারও রাজশাহী জেলায় চাহিদার তুলনায় উদ্বৃত্ত রয়েছে কোরবানির পশু

রাজশাহী জেলায় এ বছর কোরবানির জন্য প্রস্তুত আছে চার লাখ ৯৬ হাজার ৮৯৩ গবাদিপশু এমনটি জানিয়েছেন জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আতোয়ার রহমান। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেলায় চাহিদার চেয়ে কোরবানির পশু অতিরিক্ত আছে। খামারিদের মোটাতাজাকরণে নানা পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।’

মহাসড়কের পাশে কোনও পশুর হাট বসানো যাবে না বলে জানালেন রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান। তিনি বলেন, ‘প্রতিটি পশুরহাটে সিসি ক্যামেরা, জেনারেটর, নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক রাখার জন্য ইজারাদার, ব্যবসায়ী প্রতিনিধি এবং বাজার কমিটি ও পরিবহন সংশ্লিষ্ট নেতাদের বলা হয়েছে। পশু রাখার জন্য শেড তৈরি করা, আগত ব্যবসায়ী ও ক্রেতাদের জন্য পানি ও পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থা রাখার জন্যও বলা হয়েছে। হাটে হাসিল নিয়ে যেন দ্বন্দ্ব না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে বলা হয়েছে তাদের।’

জাল টাকা শনাক্তকরণ ও লেনদেন সংক্রান্ত বুথ স্থাপনে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানানো হয়েছে উল্লেখ করে আবু সুফিয়ান বলেন, ‘হাটে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি প্রতিরোধে টহল বৃদ্ধির পাশাপাশি গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হবে। সার্বিক নিরাপত্তায় হাটকেন্দ্রিক পুলিশের কন্ট্রোল রুম স্থাপন করা হবে। কোনও পশুবাহী গাড়ি জোরপূর্বক হাটে আনা যাবে না। কাঁচা চামড়া পাচার রোধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মহাসড়কে পশু লোডিং বা আনলোডিং করা যাবে না। যানজট রোধে ট্রাফিক ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হবে।’