সিরাজগঞ্জে চাহিদার তুলনায় বেশি ৪ লাখ কোরবানির পশু

পবিত্র ঈদুল আজহায় এবার সিরাজগঞ্জ জেলায় চাহিদার তুলনায় প্রায় চার লাখ কোরবানিযোগ্য পশু বেশি আছে। এগুলো দেশের অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হবে। জেলায় প্রস্তুত আছে ছয় লাখ ৫৫ হাজার ৯০৪টি কোরবানি উপযোগী গবাদিপশু। এর মধ্যে জেলায় কোরবানির চাহিদা আছে দুই লাখ ৫৯ হাজার ২৪১টির।

খামারি ও কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দিনরাত পরিশ্রম করে লাভের আশায় দেশি পদ্ধতিতে গরু মোটাতাজাকরণে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন খামারিরা। জেলার চাহিদা মিটিয়ে প্রতি বছর গবাদিপশু ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন হাটে বিক্রি করা হয়। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এবার গো-খাদ্যের দাশ বেশি হওয়ায় লালন-পালন ব্যয় বেড়েছে। এজন্য দাম বাড়বে বলে আশা করছেন খামারি ও কৃষকরা।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. একে এম আনোয়ারুল হক সবুজ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জেলার নয় উপজেলায় প্রস্তুত আছে ছয় লাখ ৫৫ হাজার ৯০৪টি কোরবানি উপযোগী গবাদিপশু। এর মধ্যে ষাঁড়, বলদ ও গাভি রয়েছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৮০০, ছাগল চার লাখ, মহিষ তিন হাজার ৮৭৫ এবং ভেড়া ৬৭ হাজার ৩০৩টি। জেলায় চাহিদা আছে দুই লাখ ৫৯ হাজার ২৪১টির। বাকি তিন লাখ ৯৬ হাজার ৬৬৩টি অন্যান্য জেলায় সরবরাহ করা হবে। প্রাকৃতিক উপায়ে পালন করায় এই জেলার পশুর চাহিদা বেশি থাকে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৭৩ সালে সমবায়ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান মিল্কভিটার একটি দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ কারাখানা শাহজাদপুরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর এখানে গড়ে ওঠে শত শত খামার। পরে তা ছড়িয়ে পড়ে সারা জেলায়। বিশেষ করে উল্লাপাড়া, কামারখন্দ, তাড়াশ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের খামারে বেশি লালন পালন করা হয়। ঈদুল আজহা সামনে রেখে সেগুলো মোটাতাজাকরণ করা হচ্ছে। প্রাণিসম্পদ বিভাগের দেওয়া প্রশিক্ষণ নিয়ে প্রাকৃতিক উপায়ে খড়, সবুজ ঘাস, ভুসি, খৈল খাইয়ে ষাঁড়গুলো মোটাতাজা করছেন খামারিরা। তবে গো-খাদ্য, ওষুধসহ সব উপকরণের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরু পালনে খরচ বেড়েছে। এজন্য বেশি দাম পাওয়ার আশা করছেন তারা। 

শাহজাদপুরের গরু ব্যবসায়ী মুন্সী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘যমুনা নদী পথে পশু নিতে গেলে মাঝপথে জোর করে নৌকা থামিয়ে পশু নামাতে বলা হয় বিভিন্ন হাটে। এতে ক্ষতির শিকার হন অনেক ব্যবসায়ী।’

সদরের গরু ব্যবসায়ী শিশির আহমেদ, আনোয়ার হোসেন ও মজিবর শেখ জানান, কড্ডা দিয়ে মহাসড়ক ছাড়া গরু পরিবহনের বিকল্প পথ নেই। এ মহাসড়কে ডাকাতি হয়। ঈদ ঘিরে প্রশাসনের সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন। ডাকাতের কবলে পড়লে সর্বস্বান্ত হয়ে যাবেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য মহাসড়কে পুলিশ প্রশাসনের কঠোর নজরদারি রাখা প্রয়োজন। যাতে পশুবাহী কোনও পরিবহনে ডাকাতি না হয়।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রউফ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘গত রোজার ঈদে সিরাজগঞ্জের মহাসড়কে কোনও অপ্রীতিকর এমনকি ডাকাতির ঘটনা ঘটেনি। কোরবানির ঈদে যেন ডাকাতি কিংবা চাঁদাবাজি না হয়, সে ব্যাপারে জেলা পুলিশের সঙ্গে সমন্বয় রাখবো আমরা। আমাদের একাধিক টিম সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য মাঠে থাকবে। আশা করা যায়, ডাকাতি হবে না।’

সড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানালেন সিরাজগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. ফারুক হোসেন। তিনি বলেন, ‘পশুবাহী যানবাহন এবং হাটকেন্দ্রিক যেকোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকবে।’

সিরাজগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) গনপতি রায় বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এবার অনুমোদিত পশুর হাট ছাড়া অন্য কোথাও অস্থায়ী হাট বসালে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে। হাট সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে কিনা, তা তদারকি করা হবে।’