ঈদে বন্দিদের জন্য বাড়ির রান্না, স্বজনদের স্বস্তি

প্রতিবছর ঈদ উপলক্ষে পাবনা জেলা কারাগারে বন্দিদের জন্য বাড়ির রান্না করা খাবার জমা দেওয়ার সুযোগ দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদের দিন থেকে পরবর্তী তিন দিন বন্দিদের স্বজনরা ভিড় করেন কারাগারের সামনে। সৃষ্টি হয় প্রচণ্ড জনসমাগম ও দীর্ঘ লাইন। অতীতে এ সুযোগে কিছু অসাধু জেল পুলিশের বিরুদ্ধে অর্থ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠলেও এবার পরিস্থিতি ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।

কারা কর্তৃপক্ষ ও স্কাউট সদস্যদের সহযোগিতায় দর্শনার্থীদের জন্য নেওয়া হয় একাধিক মানবিক ও সুশৃঙ্খল উদ্যোগ। প্রচণ্ড গরমে স্বজনদের জন্য ফটকের সামনেই বিনা মূল্যে লেবু শরবতের ব্যবস্থা রাখা হয়। একই সঙ্গে রোদ-বৃষ্টি থেকে রক্ষা পেতে তৈরি করা হয় বিশাল ছাউনি। ছাউনির নিচে রাখা হয় কয়েক শত চেয়ার ও বড় ফ্যান, যাতে অপেক্ষার সময়টা হয় স্বস্তিদায়ক।

খাবার জমা দেওয়ার প্রক্রিয়ায় ছিল নতুনত্ব ও শৃঙ্খলা। স্থাপন করা হয় দুটি আলাদা বুথ। প্রথম বুথে কয়েদির নাম, ঠিকানা ও তথ্যসংবলিত টোকেন সরবরাহ করা হয়, আর দ্বিতীয় বুথে গৃহ থেকে আনা খাবার জমা নেওয়া হয়। এরপর সেই খাবার নিরীক্ষণ শেষে কারাগারের অভ্যন্তরে বন্দিদের জন্য পাঠানো হয়।

এবারের ঈদে পাবনা জেলা কারাগারের এ ধরনের ব্যবস্থাপনায় স্বজনরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এটি একটি মানবিক ও দায়িত্বশীল উদ্যোগ, যা দেশের অন্যান্য কারাগারের জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ হতে পারে।

এই মানবিক উদ্যোগের পেছনের কারণ সম্পর্কে জানতে চাইলে পাবনা জেলা কারাগারের জেল সুপার ওমর ফারুক বলেন, ‘ঈদের আনন্দ যেন বন্দিরা তাদের স্বজনদের সঙ্গে ভাগ করে নিতে পারে, সেই চিন্তা থেকেই আমাদের এই আয়োজন।’

স্বজনদের অভিব্যক্তিও ছিল আবেগে পরিপূর্ণ। খাবার নিয়ে আসা বেবি খাতুন বলেন, ‘গত ঈদে এই সময় অনেক কষ্ট করতে হয়েছিল, রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এবার ছাউনির নিচে বসে থাকতে পারছি, শরবত খেতে পারছি সবকিছু অনেক সুন্দরভাবে হচ্ছে। এটা আমাদের কষ্ট অনেকটাই লাঘব করেছে।’

একইভাবে কোরবানির গরুর গোশত আর সেমাই নিয়ে আসা আব্দুল হান্নান নামের এক বৃদ্ধ বলেন, ‘আমার ছেলের মুখে যেন ঈদের দিনে বাড়ির খাবার তুলে দিতে পারি, সেটাই চেয়েছি। আজ কোনও হয়রানি ছাড়াই তা সম্ভব হয়েছে। আল্লাহ যেন এমন ব্যবস্থার হেফাজত করেন।’

স্বজনদের চোখে-মুখে ছিল স্বস্তির ছাপ। কারা ফটকের সামনে অপেক্ষারত আরেক দর্শনার্থী সামিনা বেগম বলেন, ‘বন্দিদের জন্য হলেও এই আয়োজন আমাদেরও সম্মানের। আমরা যেন বুঝতে পারছি আমাদের আপনজনেরা শুধু কারাবন্দি নয়, তারাও মানুষ, তারাও ভালোবাসা পাওয়ার অধিকার রাখে।’

পাবনা জেলা কারাগারের এই ব্যতিক্রমধর্মী ও মানবিক উদ্যোগ ঈদের আনন্দকে বন্দিদের পাশাপাশি তাদের স্বজনদের জন্যও করে তুলেছে স্বস্তিদায়ক ও স্মরণীয়।