কেন্দ্রে পদত্যাগপত্র পাঠালেন এনসিপির রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারী

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমন্বয় কমিটি গঠনের আট দিনের মাথায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদত্যাগপত্র পাঠিয়েছেন রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারী রাশেদুল ইসলাম। বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) রাতে পদত্যাগপত্র পাঠালেও শুক্রবার (২৭ জুন) রাতে তিনি বিষয়টি জানিয়েছেন। পদত্যাগের কারণ ব্যক্তিগত দেখিয়েছেন। গেলো ১৮ জুন তিন মাসের জন্য এনসিপির রাজশাহী জেলা ও মহানগরের সমন্বয় কমিটি ঘোষণা করা হয়। রাজশাহী জেলা সমন্বয় কমিটিতে রাখা হয় ২৫ জনকে।

পদত্যাগপত্রের চিঠিতে রাশেদুল বলেন, ‘আমি এনসিপির রাজশাহী জেলার প্রধান সমন্বয়কারীর পদ থেকে পদত্যাগপত্র জমা দিচ্ছি। এনসিপির ব্যানারে দলের সেবা করা এবং দেশের উন্নতির জন্য কাজ করা আমার জন্য সম্মানের ও সৌভাগ্যের। জেলা ইউনিটের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য আমাকে যে আস্থা, সমর্থন এবং সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। তবে ব্যক্তিগত কারণে আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে এই মুহূর্তে আমাকে আমার ভূমিকা থেকে সরে দাঁড়াতে হবে।’

তার ওপর আস্থা রেখে সুযোগ দেওয়ার জন্য এনসিপিকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাশেদুল চিঠিতে জানান, এই পদত্যাগের সিদ্ধান্তটি রাজশাহীতে দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব এবং সংগঠনের বৃদ্ধির সর্বোত্তম স্বার্থে নিয়েছেন।

জেলা এনসিপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সমন্বয় কমিটি গঠনের পর থেকেই নানা কারণে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। জেলা ও মহানগর সমন্বয় কমিটির মধ্যেও রয়েছে দূরত্ব। এনসিপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেনের ওপর ককটেল নিক্ষেপের ঘটনায় রাজশাহীতে আয়োজিত বিক্ষোভ সমাবেশে নেতাকর্মীদের সংকট দেখা দেয়। জেলা ও মহানগর কমিটিতে পদধারী নেতাই যখন ৪৩ জন, তখন ওই বিক্ষোভে অংশ নেন মাত্র ২৭ জন। জেলা ও মহানগরের ব্যানারে ওই কর্মসূচি ডাকা হলেও সেদিন নগরের বেশিরভাগ নেতাকে দেখা যায়নি। যদিও জেলার সঙ্গে দূরত্ব অস্বীকার করেছে নগর কমিটি।

গত বুধবার রাতে একটি রেস্তোরাঁয় বসেছিলেন জেলা কমিটির নেতারা। এই রেস্তোরাঁর মালিক রাশেদুল ইসলাম। সেখানে তার সামনেই ১ নম্বর যুগ্ম সমন্বয়কারী নাহিদুল ইসলাম সাজু আরেক যুগ্ম সমন্বয়কারী ফিরোজ আলমের বুকে লাথি মারেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তারা একে অপরের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের অভিযোগ তুলেছিলেন। এই ঘটনার পর আহত অবস্থায় ফিরোজ আলমকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

দলের ভেতর এমন বিশৃঙ্খলা সামাল দিতে রাজশাহী এসেছেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন। মনিরা শারমিন বলেন, ‘আমি রাজশাহী এসেছি। ইতোমধ্যে সবার সঙ্গে কথা বলেছি। সবার সঙ্গে আবারও বসবো। সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। রাজশাহীতে এনসিপির কার্যক্রম আছে, সবাই মিলেই কাজ করবো। জেলার প্রধান সমন্বয়কারী পদত্যাগপত্র পাঠালেও সেটির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। এটি এখন বিবেচনাধীন আছে।’

এ ব্যাপারে রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘আমি পদত্যাগপত্র কেন্দ্রে পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত গ্রহণ করা হয়েছে কি না, তা আমি জানি না। আমি কোনোদিন রাজনীতি করিনি। হঠাৎ এসে মনে হচ্ছে, এত বড় পদ আমার জন্য না। তবে আমি এখনও এনসিপির সঙ্গে আছি। এনসিপির ভালোটাই চাই। একান্তই ব্যক্তিগত কারণে পদত্যাগ করেছি।’

তার পদত্যাগের সঙ্গে বুধবার রাতের ঘটনার কোনও সম্পর্ক আছে কি না, জানতে চাইলে রাশেদুল ইসলাম বলেন, ‘এটাই মূল কারণ নয়। তবে ঘটনাটি আমাকে পদত্যাগে প্রভাবিত করেছে।’