রাজশাহীতে বছরে দুইবার ভুট্টা চাষ, লাভবান কৃষকরা

রাজশাহী ভুট্টাআবহাওয়া ও মাটি উপযোগী হওয়ায় বছরে দুইবার ভুট্টা চাষ করে নিজেদের ভাগ্য ফেরাচ্ছেন রাজশাহী অঞ্চলের কৃষকরা। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় জেলায় প্রতি মৌসুমেই ভুট্টার আবাদ বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি ভুট্টার চাষ হচ্ছে রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায়।
চলতি খরিপ-১ মৌসুমেও রেকর্ড পরিমাণ জমিতে ভুট্টার আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছে। রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলায় এখন মাঠজুড়ে শুধু ভুট্টার সবুজ গাছের সমারোহ।
অতীতের হিসেব বলছে, ভুট্টাচাষ হতাশ করেনি কৃষকদের। বরং এ ফসল চাষ করে খরচ তুলে দ্বিগুণেরও বেশি লাভ করছেন কৃষকরা। তাই জেলায় বাড়ছে ভুট্টার আবাদ।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি খরিপ-১ মৌসুমে জেলার ৯ উপজেলায় ৯ হাজার ৫১২ হেক্টর জমিতে ভুট্টাচাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই ২ হাজার ৫০৪ হেক্টর জমিতে ভুট্টার চাষাবাদ শুরু হয়েছে। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই এই লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ পরিচালক (পিপি) মোজদার হোসেন জানান, জেলার দুর্গাপুর, পুঠিয়া, তানোর ও পবা উপজেলায় চলতি মৌসুমে কৃষকরা ব্যাপকভাবে ভুট্টার আবাদ করেছেন। কৃষি কর্মকর্তা, উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও মাঠ কর্মীরা কৃষকদের সঠিক পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করছেন আসছেন কৃষি বিভাগের উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তা ও মাঠ কর্মীরা।
এদিকে গত রবি মৌসুমে জেলায় ৫ হাজার ৪১৯ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এই মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ভুট্টাচাষ হয়েছে ৬ হাজার ৪৯০ হেক্টর জমিতে। বিঘা প্রতি গড়ে ফলন হয়েছে ২৪ মণ।
চলতি খরিপ-১ মৌসুমে কৃষকরা বেশি ফলনশীল ও উন্নতমানের ভুট্টার জাত হিসেবে এনকে-৪০, সানশাইন-৯০০, এস গোল্ড কে-৮২৭ ও প্যাসিফিক-৩৩৯ জাতের ভুট্টার বীজ ব্যবহার করছেন।

রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কে জে এম আবদুল আউয়াল জানান, রাজশাহী অঞ্চলের অধিকাংশ জমি একটু উঁচু ও উর্বর হওয়ায় তা ভুট্টা চাষের জন্য বেশি উপযোগী। বিগত দিনের চেয়ে এবার আবহাওয়া ভুট্টা চাষের অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করা হচ্ছে।

রাজশাহী ভুট্টারাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার উত্তর কাশনি গ্রামের ভুট্টা চাষী আবুল হোসেন জানান, গত তিন বছর ধরে আমি বছরের দুই মৌসুমেই ভুট্টা চাষ করছি। রবি মৌসুমের ভুট্টা তোলার পর জমিতে আলুর চাষ করেন। এরপর ওই জমিতেই খরিপ-১ মৌসুমের ভুট্টাচাষ করি। আলুর পরে ভুট্টা চাষ করায় জমিতে সার প্রয়োগেরও প্রয়োজন পড়ে না। এতে লাভের পরিমাণও বেড়ে যায়।

তানোর উপজেলার পাঁচন্দর এলাকার ভুট্টা চাষি রহমত আলী জানান, কম খরচে বেশি ফলন ও লাভ হওয়ায় বর্তমানে এলাকার অনেক কৃষক ভুট্টা চাষের প্রতি আগ্রহী হচ্ছেন।

রাজশাহী ভুট্টাপবা উপজেলা হাটরামচন্দ্রপুর এলাকার কৃষক গোলাম রাব্বানী জানিয়েছেন, এক বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা খরচ হয়। আর বিঘায় সর্বনিম্ন ২০ মণ ভুট্টার ফলন হলেও খরচ বাদে ১২ থেকে ১৪ হাজার টাকা লাভ করা যায়।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের রাজশাহী জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা শামসুল হক জানিয়েছেন, কৃষি বিভাগের উপজেলা পর্যায়ে প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য কৃষক প্রশিক্ষণ প্রকল্পের আওতায় প্রতি উপজেলায় প্রতিবছর একশজন ভুট্টা চাষিকে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।

/এনএস/