জেএমবি সদস্যের জবানবন্দি

‘সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই ধর্মান্তরিত মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা’




জেএমবি সদস্য হাসান ফিরোজ

সরকারকে বেকায়দায় ফেলতেই পরিকল্পিতভাবে কুড়িগ্রামে ধর্মান্তরিত খ্রিস্টান মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলীকে হত্যা করা হয়। ওই মামলায় গ্রেফতার জেএমবি সদস্য হাসান ফিরোজ (২৩) আদালতে এমন জবানবন্দিই দিয়েছেন বলে দাবি করেছে পুলিশ।

সোমবার ভোর ৫টার দিকে রংপুরের কাউনিয়া উপজেলা সদরের বাসস্ট্যান্ড এলাকা থেকে ফিরোজকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর দুপুর ১২টার দিকে তাকে কুড়িগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দি রেকর্ড করেন অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাকসুদুর রহমান। পরে তাকে জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

এর আগে গত ২৮ এপ্রিল আবু নাসের রুবেল (২০) এবং মাহবুব হাসান মিলন (২৮) নামে দুই জেএমবি সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তারা গত শুক্রবার থেকে আট দিনের রিমান্ডে আছেন। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে হাসান ফিরোজকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

এদিকে, সোমবার বিকাল সাড়ে ৫টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে জেএমবি সদস্য গ্রেফতার ও স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ব্যাপারে সংবাদ সম্মেলন করেন জেলা পুলিশ সুপার মো. তবারক উল্লাহ।

তিনি জানান, মূলত এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০/১২ জন জড়িত। এর মধ্যে হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন তিনজন। এদের রিসিভের দায়িত্বে ছিলেন গ্রেফতারকৃত হাসান ফিরোজ। হাসান ফিরোজ ওরফে মোকলেস লালমনিরহাট জেলার আদিতমারী উপজেলার বাদাই ইউনিয়নের রিয়াজুল ইসলামের ছেলে। তিনি কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজে রসায়ন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। কুড়িগ্রাম শহরের ভোকেশনাল মোড় এলাকায় একটি ছাত্রাবাসে থাকতেন হাসান। তার বাবা রিয়াজুল ইসলাম লালমনিরহাট সাপটিবাড়ি কলেজের প্রভাষক।

আরও পড়ুন- রাজশাহীর সাংবাদিকসহ বিশিষ্ট ১০ ব্যক্তিকে হত্যার হুমকি

গত ফেব্রুয়ারি মাসের ২৫ তারিখ জেএমবি সদস্যরা কুড়িগ্রামে একটি হত্যাকাণ্ড ঘটানোর পরিকল্পনা করে। সে উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে রংপুরের মাহিগঞ্জ এলাকার অধিবাসী পরিচয় দিয়ে আবুল বশির নামে এক যুবক নিহত মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলীর বাড়িতে ভাড়া থাকা শুরু করেন। সেখানে অবস্থানকালে তিনি জানতে পারেন হোসেন আলী ১৭ বছর আগে ধর্মান্তরিত হয়ে খ্রিস্টান হয়েছেন। তখন তারা হোসেন আলীকে হত্যার টার্গেট করেন। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তারা দুই দফায় গাইবান্ধা এবং লালমনিরহাটে বৈঠক করেন। আর সর্বশেষ বৈঠকটি করেন গত ২১ মার্চ রাতে কুড়িগ্রামে। এরপর ২২ মার্চ সকাল ৭টার দিকে জেএমবির তিন সদস্য ধারালো অস্ত্র দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলীকে কুপিয়ে হত্যা করেন।

এ প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার আরও জানান, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সদস্যরা এই হত্যকাণ্ড ঘটিয়েছে। জড়িতদের মধ্যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। তদন্তের স্বার্থে এর বেশি এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।

উল্লেখ্য, চলতি বছরের ২২ মার্চ কুড়িগ্রাম-মোগলবাসা পাকা সড়কে সকালে হাঁটার সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে ঘাড়ে উপর্যুপরি আঘাত করে মুক্তিযোদ্ধা হোসেন আলীকে হত্যা করা হয়। এ সময় ঘটনাস্থলে ককটেলজাতীয় বিস্ফোরক ফাটানো হয়।

আরও পড়ুন- হামলার আগাম তথ্য দিন: যুক্তরাষ্ট্রকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

/বিটি/এফএস/এজে/