বঙ্গবন্ধুর সই করা সমবেদনাপত্র থাকলেও স্বীকৃতি পাননি শমসের আলী

বঙ্গবন্ধুর সই করা সমবেদনাপত্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দেওয়া সমবেদনাপত্র ও এক হাজার টাকার অনুদানের চেক পেয়েছিলেন ৭১’ এ সন্তান হারানো মা বিবিজন বেওয়া। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও শহীদ স্বীকৃতি পাননি মহান মুক্তিযুদ্ধে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর কলাখাওয়া ঘাটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে নিহত শমসের আলী।

জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীর কলাখাওয়া ঘাটে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে শমসের আলী শহীদ হন। স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শহীদ শমসের আলীর মা বিবিজন বেওয়াকে একটি সমবেদনা পত্র (স্বারক নং পত্র/ক/৬-৪-৭২/সিডি/৭১৯,তারিখ ২৮/৫/ ১৯৭৩) ও এক হাজার টাকার একটি অনুদান চেক (নম্বর সি-এ ০৪১৫২৯, তারিখ ২৪/৫/১৯৭৩) প্রদান করেন। শমসেরের মা বিবিজন বেওয়া সেগুলো যক্ষের ধনের মত আগলে রাখলেও পুত্র শোকে কাতর ও নিরক্ষর বিবিজন এক সময় সেগুলোর কথা ভুলে যান। বাড়িতে পুরাতন কাগজপত্রের ফাঁকে সেগুলো পড়ে থাকে বছরের পর বছর। স্বাধীনতার ৩৭ বছর পর ২০০৯ সালে বিবিজনের নাতি (শমসের এর বড় ভাই আলাউদ্দিনের পুত্র) শফিকুল ইসলাম জমির পুরনো দলিল খোঁজাখুঁজির সময় অপ্রত্যাশিতভাবে পেয়ে যান সেই সমবেদনা পত্র ও অনুদানের চেক। তারই প্রচেষ্টায় নিহত শমসের আলীর নাম মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করেন বিবিজন। এরপর তৎকালীন জেলা প্রশাসক আসাদুজ্জামান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান অনুসন্ধানে বিবিজনের ছেলে নিহত শমসেরের আত্মত্যাগের সত্যতা পান। কিন্তু নানা প্রতিবন্ধকতায় শেষ পর্যন্ত স্বীকৃতি মেলেনি শমসের আলীর। শহীদ জননী হওয়ার স্বপ্ন অপূর্ণ রেখেই বার্ধক্যজনিত কারণে ২০১৫ সালের ২২ অক্টোবর মারা যান শমসের আলীর মা বিবিজন বেওয়া।

অনুদানের চেকএরপর বিবিজনকে দেওয়া বঙ্গবন্ধু স্বাক্ষরিত সমবেদনা পত্র ও অনুদানের চেক বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেবেন্দ্রনাথ উরাঁও এর নজরে আসলে দুর্লভ এই পত্র ও চেকটি তিনি উপজেলা প্রশাসনের  ‘তথ্য,পরিকল্পনা ও বাজেট বই’ এ ছাপানোর ব্যবস্থা নেন। কিন্তু রাষ্ট্রীয়ভাবে শহীদ স্বীকৃতি মেলেনি শমসের আলীর।

এ দিকে, জাতির পিতা স্বাক্ষরিত সমবেদনা পত্র ও অনুদানের চেক থাকার পরও শহীদ স্বীকৃতি না পাওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেন পাক হানাদারদের গুলিতে নিহত শমসের আলীর ভাতিজা শফিকুল ইসলাম।

তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘বঙ্গবন্ধু যার আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দিয়ে সমবেদনা জানিয়ে শহীদের মায়ের কাছে সমবেদনা পত্র ও অনুদানের চেক দিয়েছিলেন, স্বাধীনতার এতো বছর পরও শহীদ মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় তার নাম না আসা জাতির পিতার সিদ্ধান্তের পরিপন্থী। আমি আশা করবো সরকার বিষয়টি সহমর্মিতার দৃষ্টিতে দেখবে এবং আমার চাচার আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দেবে।’

এ ব্যাপারে কুড়িগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরাজুল ইসলাম টুকু বলেন, ‘আসলে স্বীকৃতি দেওয়া না দেওয়া মন্ত্রণালয়ের ব্যাপার। এখানে আমার কিছু করার নেই। তবে নিহত শমসের আলীর পরিবারের লোকজন যথাযথভাবে আবেদন করে থাকলে, সরকার সংশ্লিষ্ট তথ্য প্রমাণ যাচাই করে সিদ্ধান্ত নিতে পারে।’

/বিটি/