ইক্ষু খামারে আগুনের ঘটনায় সাঁওতালদের দায়ী করলো মিল কর্তৃপক্ষ

Gaibandha Sugar Mil Fair-11 (3)গাইবান্ধার সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারে শুক্রবার বিকেলে আখের জমিতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় চিনিকল কর্তৃপক্ষ সাঁওতালদের দায়ী করছে। তবে সাঁওতালরা এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এর আগে শুক্রবার বিকেলে সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের দুটি ব্লকের আখের জমিতে হঠাৎ করে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে স্থানীয়দের সহায়তায় ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ একর জমির আখ পুড়ে যায়।

সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামারের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (ডিজিএম) আলমগীর হোসেন জানান, শুক্রবার বিকেলে হঠাৎ করে খামারের ২টি ব্লকের আখ ক্ষেতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

তিনি দাবি করেন, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে খামারের আখ ক্ষেতে সাঁওতালরা আগুন দিয়েছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে মাদারপুর গির্জার সামনে আশ্রয় নেওয়া খোকা বেশরা বলেন, ‘৬ নভেম্বরের ঘটনার পর দুই মাস ধরে তারা খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছেন। নানা শঙ্কা আর আতঙ্কে ঠিকভাবে বাইরে যেতে পারছি না। কিন্তু তারপরেও মিল কর্তৃপক্ষ তাদের হয়রানি ও ফাঁসাতে আখের জমিতে আগুন দেওয়ার মিথ্যা অভিযোগ তুলছেন।’

Gaibandha Sugar Mil Fair-11 (1)স্থানীয় ইম বাবা  বলেন, ‘আখের জমিতে কে বা কারা আগুন ধরিয়ে দেয় তা আমাদের জানা নেই। কিন্তু সাঁওতালদের ফাঁসাতে মিল কর্তৃপক্ষ এখন আমাদের দায়ী করছেন। এর আগেও আখের জমিতে আগুন ও কাটা তারের পিলাল ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। কিন্তু সে ঘটনাও আমাদের জানা ছিল না। তারপরেও মিল কর্তৃপক্ষ আমাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করেছেন।’

আজিজার রহমান নামে অপর এক ব্যক্তি বলেন, ‘হামলার পর আমরা জীবনের ভয়ে মাদারপুর ও জয়পুরপাড়ার সাঁওতাল পল্লীর খোলা আকাশের নিচে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছি। শুধু আগুন কেন সাঁওতালদের ইচ্ছে থাকলে হামলা ও ভাঙচুরসহ আরও নানা ধরণের অঘটন ঘটতো। কিন্তু হামলার পর থেকে আমরা কোন কিছুই করি নাই। তারপরেও আমাদের ওপর অনেক মিথ্যা অভিযোগ চাপানো হচ্ছে।’

এ বিষয়ে গোবিন্দগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার জানান, খামারের আখ ক্ষেতে আগুন লাগার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। তবে এ নিয়ে শনিবার বিকেল পর্যন্ত থানায় লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।

এর আগে গত বছরের ৬ নভেম্বরে হামলার পর ১৯ নভেম্বর দুপুরে খামারের ফকিরগঞ্জে ১১ আই ব্লকের আখ খেতে আগুন লাগার ঘটনা ঘটে ছিল। খবর পেয়ে গোবিন্দগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের একটি দল আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তখন খামারের প্রায় ৩৩ বিঘা জমির আখ পুড়ে যায়।

উল্লেখ্য, ১৮টি গ্রামের ১ হাজার ৮৪০ দশমিক ৩০ একর জমি ১৯৬২ সালে অধিগ্রহণ করে আখ চাষের জন্য সাহেবগঞ্জ ইক্ষু খামার গড়ে তোলে রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ। সেই জমি অধিগ্রহণের চুক্তিভঙ্গের অভিযোগ তুলে দখল ফিরে পেতে আন্দোলনে নামে সাঁওতালরা। ৬ নভেম্বর চিনিকল কর্তৃপক্ষ জমির আখ কাটতে গেলে মিল কর্তৃপক্ষ, পুলিশ ও সাঁওতালতের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এতে তিন সাঁওতাল নিহত ও আহত হন অনেকে। এরপর সাঁওতালদের বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয় পুলিশ। এ ঘটনায় সাঁওতালদের পক্ষ থেকে দুটি ও পুলিশের পক্ষ থেকে গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

/এমডিপি/